'ডটপেন ডট ইন'-এর বৈশাখী সংখ্যা প্রকাশিত হল। কিন্তু সময়টা বড়ো অস্থির - রাজ্যে, দেশে, এমনকী বিদেশেও। আমাদের শহরে ধারে দেনায় জর্জরিত পরিবার খাচ্ছে বিষ পায়েস। অর্টিজ়ম আক্রান্ত আদরের মেয়েকে নিয়ে দোকানে ঝুলছে বাপের লাশ। বাক্সবন্দি নিথর আত্মীয়কে নিয়ে কুমোরটুলির ঘাটে মা ও মেয়ে। সাত মাসের ছোট্ট শিশুর শরীরে পাশবিক অত্যাচারের চিহ্ন। মন্ত্রীর গাড়িতে চাপা পড়ছে আন্দোলনরত ছাত্র। প্রায় ছাব্বিশ হাজার (যোগ্য-অযোগ্য বিচারে যাচ্ছি না) শিক্ষক-শিক্ষিকা মহামান্য সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতির কলমের এক আঁচড়ে মুহূর্তে চাকরিহারা ― এরকম একের পর এক খবর আমরা রোজ পড়ছি, দেখছি। নিয়ম করে। এসব ঘটনা দেশজুড়েও ঘটে চলেছে। ধর্মের নামে চলছে মৃত্যুর বিভীষিকা, বিভেদ-বিভাজন। মৃত্যু, হত্যা, আত্মহত্যা, ধর্ষণ, প্রতারণা আরও কত কিছু।
আমাদের প্রাণের শহর কলকাতায় এই খবরগুলো মন খারাপ করে দেয়। আমাদের এই শহরটা এতটা বিষণ্ণ ছিল না। এতটা বেলাগাম ছিল না। এতটা বেপরোয়া ছিল না। হঠাৎ কেমন যেন সব নষ্ট হয়ে গেল।
মানুষের ধৈর্য, সহিষ্ণুতা ক্রমশ কমছে। রাস্তাঘাটে কিছু মানুষের অভদ্রতা, একশ্রেণির গাড়ি চালকের অসভ্যতা সহ্যের সীমা অতিক্রম করছে। এখন রাতভর পার্টি করার পর নেশাগ্রস্ত অবস্থায় বেপরোয়া হয়ে ভরা বাজারে সহনাগরিকদের গাড়ির তলায় পিষে হেঁচড়ে নিয়ে গেলেও শুধুমাত্র 'তারকা' হওয়ার জন্য মুহূর্তে জামিন পাওয়া যায়! বই ছিঁড়ে ২০২৫ সালের মাধ্যমিক পরীক্ষার শেষ দিনের সেলিব্রেশন হচ্ছে! রাস্তায় আছড়ে পড়ছে শিক্ষা। আমরা কোন ভবিষ্যতের পথে হাঁটছি! বাইকের সাইলেন্সার খুলে বিকট আওয়াজ তুলে পাড়া কাঁপিয়ে চলে যাওয়া ছেলেগুলোকে শাসন করা সেই গুরুজনেরা সবাই নিশ্চুপ। যাঁরা অন্যায় দেখলে অচেনা কাউকে চড় মারতেও দ্বিধা করতেন না। এখন আর এসব দেখলে কেউ বিরক্ত হন না। হয়তো অভ্যাস হয়ে গিয়েছে। সর্বত্র প্রকৃত শিক্ষার অভাব স্পষ্ট।
এ শহর, শহরের মানুষজন চোরাবালির মধ্যে ধীরে ধীরে ডুবে যাচ্ছে। দিনের শেষে নিশ্চুপ হয়ে শুনছি নস্টালজিক শহরটার নষ্ট হওয়ার গল্প। কলকাতার দোষটা কোথায়? আসলে দোষটা মানুষের। দোষটা লোভের। দোষটা দুর্নীতির। বদনাম হচ্ছে - শহরটার!
রাজ্যে উগ্র মৌলবাদী শক্তি ক্রমশ মাথাচাড়া দিচ্ছে। মানুষে মানুষে বিভেদ হানাহানিতে সম্প্রীতির বাতাবরণ কলুষিত হচ্ছে।
ওদিকে মুহুর্মুহু বোমার আঘাতে একটা গোটা শহর পৃথিবীর মানচিত্র থেকে মুছে গেল। প্যালেস্টাইনের গাজা। সংবাদপত্র, সমাজ মাধ্যম খুললেই অসহায় নিষ্পাপ শিশুদের ক্ষতবিক্ষত মুখ...
দক্ষিণপন্থীদের উল্লাস আজ তীব্র আকার নিয়েছে। একজন রাষ্ট্রনায়ক আরেকজন রাষ্ট্রপ্রধানকে নিজের দেশে সংবাদ মাধ্যমের সামনে ন্যূনতম সৌজন্যের তোয়াক্কা না করে অপমান করছেন! এ' দৃশ্যও আমরা সম্প্রতি প্রত্যক্ষ করলাম।
এরই মাঝে বাংলায় নতুন বছর এলো। বৈশাখের পয়লা দিনে মন খারাপের ছবি, আর নাই বা দেখলাম! ভালোবাসাটা তো রইল...
আসুন নববর্ষে আমরা অঙ্গীকার করি - ধর্ম নয়, রাষ্ট্র নয়, জাতি নয় - মানবতাই হোক আমাদের একমাত্র পথনির্দেশ।
শুভ নববর্ষ
পহেলা বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ।