কেন্দ্রীয় অন্তর্বর্তী বাজেট পেশ হয়েছে গত ১লা ফেব্রুয়ারি, ২০২৪। পূর্নাঙ্গ বাজেট পেশ হবে পরে, ২০২৪-এর জুলাই মাসে। এখন কেন্দ্রীয় নির্বাচন-এর দামামা। সেজন্য বলা যায়, এটা সাময়িক আয়-ব্যায় হিসাব। আগামী কয়েক মাসের জন্য, আর্থিক হিসাবনিকাশ ও পরিকল্পনা। গুরুতর কোনও দীর্ঘকালীন পরিকল্পনা তৈরির ছক নয়। অন্তর্বর্তীকালীন ঘর সামলানোর এক ব্যবস্থা মাত্র।
দেশের অর্থনৈতিক ছবি ও আশা নিয়ে এক শ্বেতপত্রও বর্তমান সরকারের তত্ত্বাবধানে প্রকাশিত। বিরোধী দলের সদস্যরা, বিপরীতে এক কালোপত্র পেশ করছে, ভারতের বেশ কিছু ঘাটতি ও বিচ্যুতির কথা সেখানে প্রকাশিত।
এমনিতেই বাজেট-এর গুরুত্ব এখন অনেক কম অনুভূত হয়। সারা বছর ধরেই চলে নানা অদল বদল, কর চাপানো, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি জনিত তর্ক-বিতর্ক। কেবল বাজেট প্রস্তাব-এর মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে না দেশের নির্দিষ্ট সময়ের অর্থনৈতিক গতিপ্রকৃতি।
বর্তমান কেন্দ্রীয় সরকারের স্বপ্ন, ভারতকে স্বাধীনতার গৌরবময় শতবর্ষে, প্রথম স্থানে নিয়ে যাওয়া, পাঁচ ট্রিলিয়ন অর্থনীতির সারিতে বসানো। আর এই মুহূর্তে স্বাধীনতার অমৃতকালে ৭৫ বর্ষ ধূমধাম করে উৎযাপন।
এদিকে বাজেট ঘাটতি জাতীয় আয়ের তিন শতাংশে আনা যায়নি। এখনও ঘাটতি পাঁচ শতাংশের ওপর।
অন্তর্বর্তী বাজেট-এর হিসাব অনুসারে, দেশের প্রতি টাকা আয়ের,২৮ শতাংশ আসে ঋণ ও অনান্য খাত হতে। প্রতি এক টাকাতে, আয়কর বাবদ আসে ১৯ শতাংশ। কোম্পানি কর হতে আসে ১৭ শতাংশ। জিএসটি বাবদ জোটে, ১৮ শতাংশ। কর ছাড়া অন্য রাজস্ব আয় ৭ শতাংশ।
অন্যদিকে, কেন্দ্রীয় সরকার খরচের যে হিসাব বাজেট ২০২৪-এর জন্য প্রকাশ করেছে, সেখানে দেখতে পাই, প্রতি টাকা খরচের ২০ শতাংশ যায় সুদ দিতে। কেন্দ্রীয় প্রকল্পে খরচ ১৬ শতাংশ, প্রতিরক্ষা খাতে খরচ ৮ শতাংশ। ভর্তুকিতে খরচ ৬ শতাংশ। এবার প্রতিরক্ষা খাতে, টাকার অংকে খরচ ধরা হয়েছে ৬ লক্ষ কোটি টাকার ওপর। সেখানে কৃষিখাতে খরচ ধরা আছে ১.২৭ লক্ষ কোটি টাকা।
দেশে বেকারত্ব ৩ শতাংশের ওপর। সংগঠিত কর্মে নিযুক্ত মানুষজন - ১০০ জনে মাত্র ৭-৮ শতাংশ। আর্থিক বৈষম্য উর্দ্ধগতি।
কোভিড উত্তর অর্থনীতি চাঙ্গা হতে, এখনও অনেকটা পথ হাঁটতে হবে।
একদিকে সামাজিক উৎসব, রামমন্দির স্থাপন। অন্যদিকে, বন্দে ভারত সহ দ্রুতগতির রেলগাড়ি প্রকল্প। একদিকে হরিয়ানা আর পাঞ্জাব-এর কৃষককুলের ফসলের জন্য নিম্নতম ক্রয়মূল্য নির্ধারণ জনিত আন্দোলন, খাদ্যদ্রব্যের মুদ্রাস্ফীতি, নাগরিকত্ব প্রমাণ জনিত উৎকণ্ঠা। অন্যদিকে রাম রাজত্ব-র গরিমাজাত সুখস্বপ্ন।
সামনে নতুনভাবে, লোকসভা সদস্য-সদস্যা নির্বাচন সংক্রান্ত বিপুল খরচ-এর পরিমাণ কয়েক হাজার কোটি টাকা। এই মুহূর্তে আমজনতা এক উদগ্রীব ও চিন্তিত অবস্থায় অপেক্ষারত।
আগামী সময়, কেমন সময়, কেমন সামাজিক এবং অর্থনৈতিক দিন বয়ে আনবে সে!
বড় এক দুশ্চিন্তা - দুর্ভাবনার কালবেলা এখন।
আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস, ২১শে ফেব্রুয়ারি, উদযাপন হবে বাংলাদেশ এবং এই বাংলাতে। মাতৃভাষা চর্চার ভেতর দিয়ে সাহিত্য ও বিজ্ঞান-এর উৎকর্ষ বৃদ্ধি হয়, অর্থনীতির শ্রীবৃদ্ধিও হয়। দেখার, দেশের মানুষ ও প্রশাসন এই মাতৃভাষা প্রসার ও প্রচারে কতটা আন্তরিক।
তার উল্লেখ অবশ্যই বাজেটে থাকে না। থাকে আমাদের নিত্যদিনের জীবনযাপনের হিসাব।
কেন্দ্রীয় সরকারের অন্তর্বর্তী বাজেট পেশের কদিন বাদেই হয়েছে পশ্চিমবঙ্গে রাজ্য সরকার-এর বার্ষিক বাজেট পেশ। কেন্দ্রীয় সরকারের পাওনাগন্ডা প্রাপ্তির ওপর তার পুরোপুরি নির্ভরতা। পশ্চিমবঙ্গের অনুদান, উৎপাদন শ্রীবৃদ্ধি, এসব আগামী নির্বাচিত কেন্দ্রীয় সরকারের নীতি ও পদক্ষেপের ওপর অনেকটাই নির্ভর করবে।
আর সে আলোচনার সময় এখন নয়, তা আগামীদিনে। এখন এক সুস্থ গণতান্ত্রিক সরকার গঠন-এর জন্য মনোনিবেশই পথ। সেই পথ শান্তিময় হোক, এই প্রার্থনা।