উৎসব-প্রিয় বাঙালীর-বারো মাসে তেরো পার্বন। কোনো উৎসব সর্বজনের - আবার কোনো উৎসব পুরুষ-স্মরণের। এর সাথে যুক্ত হয়েছে আরও কয়েকটি নতুন পরবের। কিন্ত মহিলাদের খেদ - তাদের স্মরণে নেই কোনো উৎসব অনুষ্ঠান। এই সমাজ একপেশে - তাই মনে করে তারা ব্যথিত, ম্রিয়মান। অথচ এই সমাজে-সংসারে তাদের অবদান কম তো নয় বরং বেশীই। মা-মাসী-দিদি-স্ত্রী-কণ্যা ও বৌমাদের - সব সংসারে সব অনুষ্ঠানেই দেখা যায় অগ্রণী ভূমিকায়। মরমী লেখক শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় বলেছেন - "এরা শুধু দিয়েই গেলে - পেলে না কিছুই"। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছেন - "নারী বিনে চলতে নারি"। বাংলার বুলবুল নজরুল ইসলাম বলেছেন - "এ বিশ্বে যা কিছু মহান সৃষ্টি - চিরকল্যাণকর - অর্দ্ধেক তার গড়িয়াছে নারী - অর্দ্ধেক তার নর"। বিপ্লবী মাও-সে-তুং বলেছেন - "অর্দ্ধেক আকাশ"। বাঙালি'র হিয়া চৈতন্যদেব দেখেছেন - আ-দ্বিজ-চন্ডাল-নারী-পুরুষ সকলে সমান। তিনি বলেছেন - "যথা যথা দৃষ্টি পড়ে - তথা তথা কৃষ্ণ স্ফুরে"। শ্রীশ্রী রামকৃষ্ণ পরমহংসদেব স্ত্রী সারদাদেবীকে মর্যাদা দিয়ে দেবীর আসনে বসিয়ে পূজো করেছেন। বাংলার বিবেক বিবেকানন্দ নারীর মূল্য বোঝাতে দেবী দুর্গার সঙ্গে কুমারী পূজার প্রচলন করেন এবং বলেন - "ভারতের দুই মহাপাপ - মেয়েদের পায়ে দলানো আর জাতি জাতি করে গরীব মানুষগুলোকে পিষে ফেলা"। বিবেকানন্দ-রামমোহন-বিদ্যাসাগর-নিবেদিতা প্রভৃতি মণীষীগণ স্ত্রী-স্বাধীনতা ও নারী-প্রগতির জন্য সারাটা জীবন ধরেই প্রচেষ্টা চালিয়ে গেছেন। আজও সকল শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষ নারী-প্রগতির জন্য সচেষ্ট।
স্বাধীনতার পর ভারতবর্ষ বিশেষতঃ বাংলায় যৌথ পরিবারগুলি ভাঙনের ফলে উদ্বাস্তু সমস্যার চাপে ও অর্থনৈতিক বিপর্যয়ে আজ এই একবিংশ শতকেও মহিলাদের দৈনন্দিন জীবন সংগ্রামে- কখনও একা কখনও বা অধিক রাত্রে চলাফেরা করতে হয়। কোনো কোনো মানুষের পশু-প্রবৃত্তি ফলে মাঝে মাঝেই তাদের ওপর বিপদ ঘনিয়ে আসে। তাদের যন্ত্রণায় অসহয়তায় আমরা ব্যথিত হই মুহ্যমান হই। অনুভব করি - "ডুবিছে মানুষ - সন্তান মোর মা'র"। কিছু একটা করার তাগিদ অনুভব করি। এ প্রতিরোধে তাদের মানসিক শক্তি যোগাতে ও পাশে থাকতে সকলের এগিয়ে আসা খুব জরুরী। 'বোনফোঁটা' জাতীয় উৎসব ও অনুষ্ঠান এবং তার বহুল প্রসার ও প্রচারে তাদের মনোবল বৃদ্ধি ও মানসিক শক্তি যোগানো সম্ভব। সারা বাংলার পাড়ায় পাড়ায় গ্রামে গ্রামে এ'জাতীয় উদ্যোগ ও সংগঠন দেখা দিলে রিপুতাড়িত দুষ্কৃতীকারী দুর্জনেরা ও তাদের সহায়তাকারী ও মদতদাতারা কোনো অঘটন ঘটানোর আগে অনেকবার ভাববে। এ'জাতীয় সংগঠন তাদের দিকে আঙুল তুলে বলতে পারবে - সাবধান তফাৎ যাও।
গত ৩১ জানুয়ারি, ২০২৪, বুধবার আনন্দম্ (বোনফোঁটা সমিতি)-এর উদ্যোগে অষ্টম বর্ষের বোনফোঁটা অনুষ্ঠিত হয় ২৬ নম্বর লি রোড-এর দশম তলে। অনুষ্ঠানে প্রথম ফোঁটাটি 'দুর্বার মহিলা সমন্বয় সমিতি'র সভাপতি মর্জিনা বিবিকে দিয়েছিলেন অধ্যাপক পবিত্র সরকার মহাশয়। তারপর একে একে অনেকে। আমাদের সমাজ-সংসারকে শুধু নিঃশঙ্ক নয় - আনন্দময় করতেও এ'জাতীয় সংগঠন ও উৎসব অনুষ্ঠানের ব্যাপক প্রসার ও প্রচার চাই। "না জাগিলে আজ ভারত ললনা - এ ভারত বুঝি আর জাগে না - জাগে না"। এ কাজ একদিনের নয় - একজনের নয়। জাতি-ধর্ম-বর্ণ ও ভাষা নির্বিশেষে সকলের কাছে খোলা আবেদন - 'মোদের গরব' - এই বাংলাকে, মনুষ্য সমাজকে আরও আলোকিত আরও আনন্দময় করে গড়ে তুলতে সকলে আসুন সকলে আরও সচেষ্ট হই।
বোনদের কপালে একটি ফোঁটায় অর্দ্ধেক আকাশ নয় - সারা আকাশ আলোকিত হোক এই মন্ত্রে "অন্তর মম বিকশিত কর - অন্তরতর হে"।
আনন্দম্ (বোনফোঁটা সমিতি)
যোগাযোগঃ +৯১ ৯৮৩০২৫৬৭৩১