কবিতা

সংক্রান্তি



পাপিয়া রায়


ফিরতে চাইলেই
ফেরা যায়না,
তুমিও পারোনি।
নিদারুণ ব্যাকুলতা
বুকে চেপে বলেছিলে,
"এত বছর ফিরেও দেখেনি,
আছি কি মরে গেছি!"

সেদিন দুপুরে মাদুরে শুয়ে
জড়িয়ে কেঁদে বলেছিলে -
ছেড়ে যাবেনা, কথা দিয়েছিলে।
দিগন্ত বিস্তৃত হেমন্তের মাঝে
ব্যস্ত ছিলে, ধান কুড়াতে।

ছুটতে ছুটতে জাহানারা এসে জানালো,
"আম্মি ওপার থেকে আব্বু আইছে,
আমাগো নে যাবে বলে..."

হঠাৎ হিমেল দমকা হাওয়া
এক নিমেষে পাল্টে দিলো
তোমার প্রতিশ্রুতি।

সারারাত কেউ ঘুমাতে পারেনি,
তোমার কথা ভেবে।
আব্দুল, বড্ড জেদি ছিল
রান্নাঘরের খুঁটি জড়িয়ে
অঝোরে কেঁদেছিল খুব...

সারাদিনের কতো অভ্যেস
ধান দেখা, পাখি তাড়ানো,
দমবন্ধ করে এক ডুবে
পুকুরের এপাড় থেকে ওপাড় গিয়ে ওঠা...

সন্ধ্যেয় পাশে বসে
হ্যারিকেনের আবছা আলোয়
লেখাপড়ার বৃথা চেষ্টা
এক নিমেষে যেন সব
ঝাপসা হতে লাগলো।

দুদিন ধরে কত কান্নাকাটি
না খেয়ে শুকনো মুখে
শুধু ঘোরাফেরা...
বারবার বুকে জড়িয়ে
কত স্মৃতি আর কথা বলা।

তারপর সবাই বোঝালো...
খুশি থাকবে তুমি,
জাহানারার বাপের সাথে।

সেদিন সকাল থেকে চলছিল
তোমাকে ওপারে পাঠানোর আয়োজন।
তেঁতুল, আচার, গুড়
সাজিয়ে দিচ্ছিল তোমার
পুঁটলির মধ্যে।

আমি তোমার বানানো
চাটাইটা নিয়ে দাঁড়িয়েছিলাম
বারান্দার এক কোণে।
অবলা গৃহপালিতগুলো
কি বুঝেছিল কি জানি!
কেমন যেন মনখারাপ করে
ঘাড় ঘুরিয়ে দেখছিল তোমায়।

মা দুর্গার বিসর্জনের মতো
সবাই চললাম কালিন্দীর পাড়ে।
সূর্য তখন অস্তরাগের লালিত আভায়
ঢেকে দিয়েছে চারিদিক,

দেখলাম,
ওপারের আজানের সাথে
তোমার নৌকা মিলিয়ে গেল
সীমান্ত পেরিয়ে...