মাঘী পূর্ণিমার আলোভাসি সন্ধ্যেতে 'বাই লূম'-এর ঢাউস কাস্টমাইজড্ পেপারব্যাগটা হাতে নিয়ে খুশিতে একপ্রকার উড়তে উড়তেই বাড়ি ফিরেছিল জয়ী। আর ফিরেই, হাওয়ার গতিতে এবড়ো খেবড়ো সিঁড়িগুলো কোনোমতে টপকেই সোজা মেজোপিসির ঘরে হাজির হয়েছিল সে।
এ' বাড়িতে মেজোপিসির আবলুস কাঠের আলমারিটাই জয়ীর একমাত্র গোপন সিন্দুক। পরাগের দেওয়া যা কিছু উপহার, চিঠি, চিরকুট আর পরাগের কারণে পাওয়া যা কিছু সুখ, যা কিছু দুঃখ, মান, অভিমান... সবটুকুকেই... হ্যাঁ, সবটুকুকে-ই জয়ী জমিয়ে রেখেছে যে আকাশ রঙের ডায়েরিটার পাতায় পাতায়, সেই সবগুলোকে একসঙ্গে পুরে, মেয়েটা লুকিয়ে রেখে দেয় ঐ আলমারির ভারি পাল্লাদুটোর আড়ালে। মেজোপিসির থেকে লুঠ করে নেওয়া, আপাততঃ নিজের, বিশেষ বিশেষ ঐ খোপগুলোর মধ্যে পুরে আচ্ছা'সে তালাবন্দী করে!
এমনকি, পরাগ যে রঙ বেরঙের মোড়কে মুড়ে মুড়ে বইটা, পেনটা, দুলটা হাজির করে জয়ীর কাছে, সেগুলোকেও প্রাণে ধরে ফেলতে পারে না জয়ী। পরম যত্নে সেগুলোকেও জমিয়ে রাখে সে, সবেধন নীলমণি ঐ মেজোপিসির আলমারিটার মধ্যেই।
এরপর মেজোপিসির দায়িত্ব সেগুলোকে পরম স্নেহে, আড়ালের প্রশ্রয়ে আগলে রাখা... বাড়ির আর কাউকে কিচ্ছুটি না জানিয়ে।
মেজোপিসি বাড়ির অন্যদের কাছে শ্রীমতী ভয়ঙ্করী হলেও জয়ীর কাছে একেবারে মাটির মানুষটি।
কপট রাগ দেখায় বটে শুরুতে। কিন্তু জয়ী জানে সেগুলো পুরো নাটক!
সত্যিকারের রেগে গেলে, বিরক্ত হলে কেউ কি ক্রমাগত নিজের স্বত্ব থেকে আলমারির একটা একটা করে তাক জয়ীকে একেবারেই ছেড়ে দেয়! আরও বেশি করে জায়গা করে দেয় জয়ীর খুব নরম গোপনীয়তাগুলোকে সুরক্ষিত রাখবে বলে?
কৃতজ্ঞতায় চোখ দুটো ভিজে আসে জয়ীর!
যত্ন করে মেজোপিসির মোটা কালো ফ্রেমের চশমাটা চোখ থেকে খুলে সরিয়ে রেখে, মানুষটার ফর্সা ভরাট গালদুটোকে বেশ করে টিপে দেয় জয়ী হামেশাই। গলাটাও খুব কষে জড়িয়ে ধরে তখন!
মেজোপিসিও ফিক্ করে হেসে ফেলে বলে ওঠে, "একটি আস্ত হনুমতি!"
ব্যাস্!
সব রাগ ঝাল হাসির গড়াগড়িতে শেষে ধুয়েমুছে ভেসে যায় জানলার পাশঘেঁষা খাটটার মেঘসাদা চাদরে, সাদা লেস বসানো মাথার বালিশের সব ক'টা কুচির ভাঁজে ভাঁজে, লাল টুকটুকে মেঝেটায়, চুন খসা সাদা দেওয়ালের প্রতি ইঞ্চিতে, শার্সিতে, কড়িকাঠে, জানলার সোজা সোজা গরাদগুলোর ফাঁক দিয়ে চেয়ে দেখা আকাশটার পরতে পরতে!
মেজোপিসির সব কিছুতেই সাদা রঙ। সব কিছুতেই সুতোয় বোনা সহজ পারিপাট্য।
আর এই ঘরটা জুড়ে অদ্ভুত সুন্দর একটা ফুল ফুল গন্ধ!
কিন্তু, গন্ধটা ঠিক কি ফুলের, জয়ী ধরতে পারে না!
ঘরটার কোথাও কোনও ফুলদানি... নিদেনপক্ষে একটা ধূপের কাঠিও কখনও জ্বলতে দেখেনি জয়ী।
এ' বাড়ির ঠাকুরঘরের চৌকাঠটুকুও পর্যন্ত মেজোপিসিকে কোনোদিনও মাড়াতে দেখেনি জয়ী।
মর্ণিং স্কুল, খবরের কাগজ, বই, রেডিয়ো আর সেলাইফোঁড়াই নিয়েই একলার জীবনটা কেমন দাপটের সঙ্গে কাটিয়ে গেল এই মেজোপিসি!
তা, সেদিনও শাড়ির পেপারব্যাগটাকে আঁচলে লুকিয়ে, সন্তর্পণে এ' ঘরে ঢুকে, জয়ী যখন মেজোপিসির আঁচলের খুঁট থেকে আলমারির চাবিটা খুলে নিচ্ছে, মেজোপিসি তখনও আধা উপুড় হয়ে শুয়ে, খাটে মেলে রাখা খবরের কাগজটায় ঝুঁকে কি একটা যেন খুব মন দিয়ে পড়ছে!
জয়ীর প্রতিটি অঙ্গুলি-হেলন এই মানুষটার নখদর্পণে। তাই জয়ীর দিকে একটিবারও না তাকিয়ে, মেজোপিসি শুধু বলে উঠেছিল, "এবার আমাকেই সবসুদ্দু বের করে দিয়ে বরং আস্ত পরাগটাকেই পুরে ফ্যাল্ না আলমারিটার মধ্যে। এই রোজ রোজ চাবি খোলো রে, পাল্লা খোলো রে, পিসিটার কোন জিনিসটাকে আরও ঠুসে গুঁজে পুরে রাখা যায় তার ভাবনা ভাবো রে... নিত্য এত শত ঝামেলা আর শুধু শুধু কেন নেওয়া, মা জননী?"
জয়ী গায়ে মাখেনি কথাটা একটুও। কোনোদিনই মাখে না। বরং পিসির আঁচলটা ছেড়ে তাড়াতাড়ি ঘরের দরজায় খিল আঁটে সে। তারপর ঝলমলে মুখে ব্যাগটা থেকে পরাগের উপহার দেওয়া লিনেনের দুধসাদা রঙের প্রথম শাড়িখানা পিসির চোখের সামনে মেলে ধরে।
খোশমেজাজেই ছিল পিসি! শাড়িটায় চোখ পড়তেই হঠাৎ কেমন একটা বিদ্যুৎ খেলে গেল মানুষটার চোখ দুটোতে। নিমেষেই নিজেকে আবার সামলেও নিয়েছিল মানুষটা। একটু মলিন হাসি ঠোঁটদুটোতে মেখে পিসি বলে উঠেছিল শুধু, "পরাগ দিয়েছে বুঝি?"
পিসির গলাটা জড়িয়ে আহ্লাদী জয়ী বলে উঠেছিল শুধু, "উমম্! কেমন গো শাড়িটা?"
"খাসা রে জয়ী! খুব সুন্দর শাড়ি! তাড়াতাড়ি প'রে ফেলিস, কেমন! জমিয়ে রাখিস না। ...এমন শাড়ি জমিয়ে রাখতে নেই রে!"
সেই সন্ধ্যেটায় জয়ী বিশেষ খুশি ছিল। পিসির কথার গভীরে তাই তেমন কান পাতেনি।
উড়তে উড়তেই এরপর চাবি খুলে প্যাকেট, পেপারব্যাগ সমেত পুরো শাড়িটাই চালান করে দিয়েছিল আলমারিটার নতুন একটা তাকে। পিসি একনজরে শুধু তাকটাকে চিনে রেখেছিল। তারপর আবার খবরের কাগজটার দিকে ঝুঁকে নিজের পুরোনো মনোযোগেই ফিরে গেছিল।
জয়ীও নিজের মধ্যে ডুবে ছিল সেদিন। পরাগকে অন্তরে পুরোপুরি মেখে ছিল সে, সেদিন।
মেজোপিসিকে আর বিরক্ত করেনি, বরং দরজার খিলটা খুলে বেরিয়ে গেছিল ছাদের সিঁড়ির পাশের লম্বাটে নিঝুম মেজোপিসির এই ঘরটা থেকে।
দিনগুলো তারপর এগিয়ে গেছিল তিরতিরে সুখী নদীটার মতোই। পরাগের একনিষ্ঠ ভালোবাসাতে টইটম্বুর হয়ে, আর, নিজের মাস্টার্সের ফাইনাল ইয়ারের প্রস্তুতি নিতে নিতেই। পরাগের যোগ্য করে নিজেকেও গড়ে তুলতে হ'তো তো জয়ীকে!
জয়ীর পারিবারিক দিনগুলোও একদম স্বাভাবিক ছন্দেই এগোচ্ছিল সে' সময়টায়।
মা, কাকিমার সঙ্গে মেজোপিসির প্রাত্যহিক কোন্দল, গোঁসা করে যে যার মতো ঘরে খিল দেওয়া, স্ব-ঘোষিত ভুখ হরতাল, বাবার কাছে, ছোটকার কাছে নাকের জলে চোখের জলে হয়ে দুই গৃহিণীর মেজোপিসির বিরুদ্ধে হাজারো নালিশ জানানো এবং পরিশেষে, মেজোপিসির প্রবল প্রতাপের কাছে সবশুদ্ধু গো হারান হেরে, তার ঘরেরই বন্ধ দরজার বাইরেটায় দাঁড়িয়ে, নানান স্বরগ্রামে, রাগ ভুলে দু' মুঠো অন্ন মুখে তোলার জন্যে গোটা পরিবারের ধর্ণা দেওয়া পর্ব এবং অবশেষে তেঁনার মতো রায়বাঘিনীর মানভঞ্জন ঘটানো... এই প্রাত্যহিক পালায় জয়ীদের গোটা ফাল্গুন, গোটা চৈত্রমাসটুকুও হৈ হৈ করে পার হয়ে গেছিল।
পরাগ এই সময়টায় আবারও জলন্ধরের বিএসএফ ইন্টেলিজেন্স ইউনিটে... নিজের কর্মস্থলে।
সামনের বৈশাখে বাড়ি ফিরেই এবার বাবা-মা সমেত পরাগ আসবে জয়ীদের মধ্য কলকাতার এই রক্ষণশীল একান্নবর্তী পরিবারে... কোনো এক বৈকালিক বৈঠকে... জয়ীকে একান্ত নিজের করে নিয়ে যাবার আর্জিটুকু নিয়ে।
তাদের দু'জনের এই গোপন মেলামেশার খবরটুকু সেদিনই প্রথম প্রকাশ্যে আসবে জয়ীর বাবা-মা বা ছোটকা'র একটু সেকেলে চিন্তাধারার মুখোমুখি।
তার আগে আসবে বৈশাখের পয়লা তারিখটা।
পরাগ জয়ীকে এবারে ফ্লোটেলে ট্রিট্ দেবে বলে রেখেছে।
তার পরিবর্তে ওর শুধুমাত্র একটাই আবদার। শরতের সাদা মেঘ রঙের এই শাড়িটায় সেজে দাঁড়াতে হবে জয়ীকে পরাগের সামনে... বাঙালির বছর শুরুর দিনটাতে।
পরাগ না বললেও জয়ী এই শাড়িটাই প'রতো!
গড়িয়াহাট আর হাতিবাগান ঘুরে ঘুরে সে জোগাড় করে রেখেছে এ' শাড়ির সঙ্গে মানায় যা কিছু অ্যাক্সেসরিজ্। টিপের পাতা, লিপস্টিক, নেল এনামেল।
ক্যালেন্ডারের পাতাগুলো রোজ ছুঁয়ে ছুঁয়ে এগিয়ে চলেছে জয়ীদের শোভাবাজারের বাড়ির প্রতিদিনের সকালগুলো। রোদগুলো একটু একটু করে বেশি তেজী হয়ে উঠছে।
জয়ী মনে মনে রোমাঞ্চিত হয়... বৈশাখ এসে পড়লো প্রায়!
ওর পরাগও এসে পড়লো প্রায়!
নাহ্!
পরাগ সময়মতো পৌঁছতে পারেনি শেষমেশ... জয়ীদের লাল মেঝের বিশাল বৈঠকখানাটায়।
ইমারজেন্সি ডিউটি অর্ডার এসে পড়ায়, তার এপ্রিলের ছুটিটা নাকোচ করে দেয় হেড কোয়ার্টার্স।
জয়ী মুখটাতে কালবোশেখী ঝড় মেখে পয়লা বৈশাখের সারাটা দিন বসে রইল... বাদল ঘিরে রইল ওর বাকি বৈশাখী দিনগুলোতে... জৈষ্ঠ্যি'র পুরোটাও!
মাঝের কিছুদিন ভাগ্যিস এন্ড সেম্-এর পরীক্ষাটা ছিল! পরীক্ষা পরীক্ষা করে, বই-খাতা-নোটসের সমুদ্রে ডুবে কোনওমতে দিনগুলোকে পার করল জয়ী।
অবশেষে এলো আষাঢ়... রাতের চেয়েও অন্ধকার একটা রোববারের সকাল!
আকাশ সেদিন সত্যি সত্যিই জমাট কালো মেঘে সেজেগুজে ব'সে আছে ভোর থেকে।
ঘুম ভেঙেও চুপ করে শুয়েছিল জয়ী।
কর্মহীন, সঙ্গীহীন এমন দিনে জয়ীর নতুন কোনো দুঃখও নেই... সুখও নেই।
হঠাৎ ইথার তরঙ্গে ভেসে ভেসে সুখ নামের বিশেষ কন্ঠটা কানে এলো।
হ্যাঁ, পরাগই আজ সাতসকালে ফোন করেছে।
দমকা সারপ্রাইজে জয়ীর মনের সবটুকু মেঘকে একটু একটু করে নিয়ে, আকাশের গায়ে হেসে হেসে জমাচ্ছে পরাগ।
আষাঢ় এবার দারুণ খুশির একটা বৃষ্টি নামাবে এখুনি।
গতকাল রাতেই কলকাতায় ফিরে এসেছে পরাগ... অবশেষে ছুটি পেয়েছে সে।
খুব শিগগিরই জয়ীর কাছে আসতে চায় পরাগ... মা-বাবাকে সাথে নিয়ে।
আরও অনেক কথা বলে চলেছে পরাগ... কিচ্ছু শুনতে পাচ্ছে না আর জয়ী!
সে শুধু বৃষ্টিকে আকাশ থেকে, আর নিজের দু'গাল বেয়ে আনন্দধারায় ঝরে যেতে দেখছে।
* * * *
আজ ৭ই আষাঢ়।
জয়ী আজ খুব সুন্দর করে সেজেছিল পরাগের উপহার দেওয়া ঐ মেঘসাদা শাড়িটায়।
দু'পক্ষের অভিভাবকদের সম্মতিতে পরাগের সাথে ওর বিয়ের পাকাকথা হয়ে গেছে আজ বিকেলে।
আনন্দের বানভাসিতে বাড়ির সবাই আজ মাতোয়ারা।
পরাগ সর্বার্থেই অতীব সুপাত্র... এ' বিষয়ে বাড়ির বড়দের মধ্যে কোনও মতান্তর নেই।
মোটামুটি সামনের ফাল্গুনের মধ্যেই বিয়ের দিন স্থির করে নেওয়া হবে... এমনই কথা দেওয়া নেওয়ার শেষে পরাগরা বিদায় নিয়েছে।
এবার জয়ী একটু চাপমুক্ত হয়েছে মনে মনে।
মা, কাকিমার প্রসন্ন মেজাজ জয়ীকে এতোদিনে পরাগকে ঘিরে যাবতীয় গোপনীয়তা আর সতর্কতার বন্দীদশা থেকে মুক্ত করেছে।
পালকের মতো উড়তে উড়তেই আজকের সন্ধ্যের বাকি সময়টা জয়ী ছাদেই কাটিয়ে ফেলল।
আজ আকাশটা পরিষ্কার। ভারি মায়াবী একটা চাঁদ আজ আকাশে।
জয়ী ছাদ থেকে নেমে এবার মেজোপিসির ঘরের দরজায় এসে দাঁড়ালো।
মেজোপিসির আলমারি থেকে ওর যা কিছু গোপন সঞ্চয়, সবটুকুই সে এতোদিনে নিজের ঘরে, নিজের আলমারিটায় এনে রাখতে পারবে।
দরজাটা ভেজানো ছিল।
খুব নরম একটা আলো জ্বলছে মেজোপিসির ঘরে।
আস্তে করে দরজাটা খুলে জয়ী দেখলো, জানালাটার দিকে ফিরে আধশোয়া অবস্থায় শুয়ে আছে মেজোপিসি।
পরনে একটা সাদা তাঁতের শাড়ি... মেটে লাল আর খয়ের রঙের সরু ঢালা পাড়, সে' শাড়িটারও... হুবহু জয়ীর এই লিনেন শাড়ির পাড়খানির মতোই।
ছ্যাঁৎ করে উঠলো জয়ীর বুকটা।
"কি হয়েছে মেজোপিসি তোমার? এমন করে বসে আছো কেন তুমি?"
পরাগদের সামনে মেজোপিসি তো আজ স্বাভাবিকই ছিল!
মেজোপিসির গায়ে হাত বুলিয়ে আদর করতে করতে জয়ী আবার বলল, "এ' শাড়িটা আগে কখনও পরোনি তো তুমি! একদম পরাগের শাড়িটার মতোই তো দেখতে... তাই না!"
মেজোপিসি একটু জোর করেই হাসল যেন!
তারপর সস্নেহে বলে উঠলো, "যা, মা, তোর জিনিসগুলো এবার বের করে নে তো দিকিনি! আলমারিটায় এবার আমার জন্যেও একটু জায়গা ছাড়! তোর জ্বালায় কোনও জিনিসই তো খুঁজে পাইনে ইস্কুল যাবার সময়টায়! প'রতে দেখবিটা কেমন করে শুনি! ...নে, এবার খানিক শান্তি দে তো আমায়!"
জয়ী হাসতে হাসতে একটু একটু করে নিজের যা কিছু সম্পত্তি স্থানান্তরিত করলো।
ওরও তো ত্বর সইছিল না!
নিজের পরাগকে একদম নিজের চোখের নাগালে রাখার সুখটা সে আজ থেকেই একটু একটু করে পেতে চায়।
...জয়ী চলে গেছে এ' আলমারির স্বত্বটুকু ছেড়ে।
এবার ওর মেজোপিসি এবং মেজোপিসির ঐ আবলুস কাঠের আলমারিটা দারুণ একা... ফাঁকা...
জয়ীর মেজোপিসি এবার পরনের দুধসাদা মেঘ মেঘ শাড়িটার গায়ে আরও একবার হাত বোলালো। শাড়িটার মেটে লাল আর খয়ের মেশানো সরু ঢালা পাড়খানি চোখের খুব সামনে তুলে এনে পরম মমতায় আরও একবার দেখলো মানুষটি।
সুরঞ্জন উপহার দিয়েছিল এ' শাড়িটা তাকে!
সুরঞ্জন জয়ীর মেজোপিসির সেই মানুষটি, যাকে নকশালী এনকাউন্টারে চিরতরে হারিয়ে ফেলেছিল পরবর্তীতেও অনূঢ়া, এই মানুষটা।
সেদিনটাও ছিল ৭ই আষাঢ়।
এই শাড়িটা প'রেই সেদিন সন্ধ্যে'য় সে অপেক্ষায় ছিল সুরঞ্জন আসবে বলে।
সেই ৭ই আষাঢ়, এ' বাড়ির কাউকে না জানিয়ে, এক কাপড়ে হতদরিদ্র সুরঞ্জনের হাতটা ধরে বেরিয়ে যাবার দিনটা ছিল বাসবী'র!