বিবিধ

লেখকদের সমাজ হল এক আনন্দময় সমাজ



ডাঃ প্রকাশ মল্লিক


ইংরাজিতে একটা কথা আছে বুকস্ আর ডিলাইটফুল। বইয়ের পাতা উল্টিয়ে দেখলে বইয়ের পাতা বলবে দেখ আমাদের মধ্যে বহু শত বছরের জ্ঞানরাশি অর্থাৎ মনীষীদের চিন্তা-ভাবনা কালো অক্ষরের শৃঙ্খল ছাপানো কাগজে আবদ্ধ রয়েছে। আমাদের মধ্যে রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, সেক্সপিয়ার, বঙ্কিমচন্দ্র, ওয়ার্ডস্ ওয়ার্থ, আইনস্টাইন, নিউটন, জগদীশচন্দ্র বসু, মাইকেল ফ্যারাডে, সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণন, কবি কালিদাস, কলম্বাস, ভাস্কো-দা-গামা, স্বামীজী, নেতাজী, ডাঃ বি. আর. আম্বেদকর, জর্জ ওয়াশিংটন প্রমুখ মানুষজন জীবন্ত অবস্থায় রয়েছেন।

এই আলোচনায় আমরা অন্য একটি দৃষ্টান্তে যেতে পারি। বিজ্ঞানী মাইকেল ফ্যারাডে অত্যন্ত বইপ্রেমী ছিলেন। তিনি ছোটবেলায় একটি দোকানে বই বাঁধাই-এর কাজ করতে করতে তাঁর চোখে এক সময় পড়ল 'বিদ্যুৎ' শব্দটি। তিনি বিদ্যুৎ সম্পর্কে বিখ্যাত বিজ্ঞানী হামফ্রে ডেভির পরীক্ষাগারে সহকারী হিসেবে কাজ করতেন। পরে ফ্যারাডে বিদ্যুতের নথিসূত্র, তড়িৎ চুম্বকীয় আবেশের সূত্র, বরফ পরীক্ষা ইত্যাদি আবিষ্কার করেন।

বিজ্ঞানী ডেভিকে একজন প্রশ্ন করলেন, আপনার জীবনে সবচেয়ে বড় আবিষ্কার কি? তিনি উত্তর দিয়েছিলেন - এই আবিষ্কারটি হল মাইকেল ফ্যারাডে। আমরা প্রতিদিনই মানব সমাজ সম্পর্কে কম-বেশি আলোচনা করি। অর্থাৎ মানব সমাজ যুদ্ধবিগ্রহ, সভ্যতা-সংস্কৃতি, রাজনীতি, মানব সমাজের ভবিষ্যৎ ও পরিবেশ দূষণ, সমাজের ভালো-মন্দ ইত্যাদি বিষয়ে আলোচনা করি। কিন্তু বইয়ের সমাজ ও বই নিয়ে বিশেষ কথাবার্তা বলি না।

বই-এর সমাজ হল আসলে একটি লাইব্রেরী। গ্রন্থাগার সম্পর্কে রবীন্দ্রনাথ বলেছেন - "যাহা সমুদ্রের মত বৎসরের কল্লোলকেই যদি এমন করিয়া বাঁধিয়া রাখিতে পারিত যে সে ঘুমাইয়া শিশুটির মতো চুপ করিয়া থাকিত। তবে সেই নীরব মহাশব্দের সহিত এই লাইব্রেরীর তুলনা হইত, এখানে ভাষা চুপ করিয়া আছে, প্রবাহ স্থির হইয়া আছে। মানবাত্মার অমর আলোক কালের অক্ষরের শৃঙ্খলে কাগজের কারাগারে বাঁধা পড়িয়া আছে। এই লাইব্রেরীর মধ্যে মানবজীবনের বন্যাকে বাঁধিয়া রাখিয়াছে।" আমাদের জীবনে হাসপাতালের যেমন প্রয়োজন আছে, তেমনই লাইব্রেরীরও প্রয়োজন আছে। বই একটি আনন্দময় উৎস। যখন কোন গৃহে 'শিশুমনে দ্বন্দ্বের চিরন্তন ঝংকারের এই আলোচনা চলতে থাকে আমাদের মধ্যে আনন্দের ফোয়ারা বয়ে যায়। আমাদের মধ্যবিত্ত মানুষের সংসারের খবর কথা বাদ দিয়ে বই কেনায় অতিরিক্ত পয়সা থাকে না। সেক্ষেত্রে পাবলিক লাইব্রেরী থেকে বই এনে পাঠ করা যেতে পারে। প্রখ্যাত রসায়ন বিজ্ঞানী আচার্য প্রফুল্ল রায় বলেছেন, "আমি দিনের মধ্যে দু'ঘণ্টা ভাল পুস্তককে সঙ্গী করে কাটিয়ে দিই। দিন সার্থক হয়। জগতে যা কিছু সং চিন্তা, উৎকৃষ্ট ভাব আছে, যা কিছু উদ্দীপনা সৃষ্টি করে এবং মানুষের হৃদয়ে প্রেরণা দেয় তার সবই পুস্তকে পাওয়া যায়।

আমরা জানি সুশিক্ষিত মন ও সংস্কৃত চিত্তই বই খোঁজে। জ্ঞানের যেমন বিচিত্র বিভাগ আছে - তেমনি মানুষের রুচি এবং রসবোধেরও অনেক বৈচিত্র রয়েছে। মানব সভ্যতাকে সমৃদ্ধ ও আলোকিত করার ক্ষেত্রে বইপত্রের ও গ্রন্থাগারের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই বই লেখেন লেখক। তাই লেখক সমাজই এক আনন্দময় সমাজ।

প্রশ্ন উঠতে পারে, স্মার্টফোন, মোবাইল, ইন্টারনেট, ফেসবুক ও হোয়াটসঅ্যাপ-এর যুগে বইয়ের মূল্য কতটুকু। এর উত্তরে বলা যায় শ্রীমদ ভাগবতগীতা, কোরান বা কোনো বৃহৎ উপন্যাস, বৈষ্ণব পদাবলি ইত্যাদি বইয়ের নির্যাস পেতে হলে আমাদেরকে পুস্তকের সহযোগিতা নিতে হবে। রামায়ণ, মহাভারত, মেঘনাদ বধ কাব্য ইত্যাদির আনন্দ পেতে হলে পুস্তক পাঠ ভিন্ন পথ নেই।

[ডাঃ প্রকাশ মল্লিক, এম.ডি. (হোমিও), সিনিয়র সুপার স্পেশালিস্ট হোমিওপ্যাথ, আন্তর্জাতিক সভাপতিঃ ওয়ার্ল্ড ফেডারেশন অফ হোমিওপ্যাথি। মোবাইলঃ +৯১ ৯৮৩০০২৩৪৮৭]

চিত্রঋণঃ অন্তর্জাল থেকে প্রাপ্ত।