ভ্রমণ

পিন্ডারী জিরো পয়েন্ট



প্রবীর কুমার ধর


সে'বার আবহাওয়া দপ্তরের বিলম্বে বর্ষা নামবার ভবিষ্যৎবাণীতে মনে সাহস সঞ্চয় করে অবশেষে জুনের মাঝামাঝি ১২৩১৭ আপ অকাল তখত এক্সপ্রেসে চড়ে বসলাম। গন্তব্য উত্তরাখন্ডের বাগেশ্বর জেলার দেবীকুন্ড। সময় বাঁচলে পিন্ডারী। সফরসঙ্গী হিসাবে চললেন বাপ্পাদিত্যবাবু। পেশায় মাষ্টারমশাই। কলেজে সপ্তাহ খানেকের 'ছুটি ম্যানেজ' আর গৃহে অনুমতি আদায় করে শেষ অবধি যথা সময় ট্রেনের কামরায় উপস্থিত হলেন।

১৮ জুন, ২০১২

কামরার আশেপাশের সহযাত্রী তথা হকারদের হাঁকডাকের চোটে ঘুম ভেঙে গেল। ঘড়িতে ভোর পাঁচটা। এত ভোরে বাপ্পাদিত্যবাবুর উদ্যোগে মেলা গরম চায়ের ভাঁড়ে চুমুক দিতে দিতে ট্রেনের জানলার ধারে এসে বসি। দৈনন্দিন জীবনের বাঁধা-বিঘ্ন- পিছুটানকে প্রবল উপেক্ষায় পেছনে ফেলে দুরন্ত গতিতে ছুটে চলেছে ১২৩১৭ আপ অকাল তখত এক্সপ্রেস। একে একে পিছনে চলে যেতে থাকে পথের দু'ধারের গাছপালা, শস্যক্ষেত। বাইরে দিগন্তে আসন্ন সূর্যোদয়ের আগে চলেছে লাল আবিরের খেলা। মেঘমুক্ত আকাশ। জুন মাসের ১৮ তারিখ হলেও গোটা উত্তর ভারতে এখনও অবধি বর্ষা নামেনি। এটা চাষীভায়েদের অবশ্যই দুশ্চিন্তার বিষয়। তবে দেবীকুন্ডের যাত্রীদের কাছে এ যথেষ্টই সৌভাগ্যের।


গুগল ম্যাপে পিন্ডারীর অবস্থান।

সকাল ছটা। ট্রেন এসে পৌঁছল বেরিলী স্টেশন। রেলওয়ে ওয়েটিং রুমে প্রাতকৃত্য স্নানাদি সেরে স্টেশনের অটো স্ট্যান্ড থেকে একটা অটো ধরে সোজা বেরিলীর পুরোনো বাস স্ট্যান্ডে এসে হলদুয়ানীগামী একটি বাসে চড়ে বসলাম। সকাল সাড়ে আটটা নাগাদ বাস ছেড়ে হলদুয়ানী পৌঁছাল বেলা ঠিক বারোটা নাগাদ। বাস স্টান্ডে খোঁজ নিয়ে জানা গেল সারাদিনে একটিমাত্র বাস হলদুয়ানী থেকে বাগেশ্বর অবধি যায়, তবে তা ছাড়ে ভোর চারটে নাগাদ। অগত্যা বাসস্ট্যান্ডের বাইরে এসে গাড়ী স্ট্যান্ড থেকে একটি অল্টো গাড়ীতে চড়ে বসলাম। আরও দুটি যাত্রী জোগাড় করার পর গাড়ী ছাড়ল বেলা দেড়টা নাগাদ। ন্যাশানাল হাইওয়ে ৮৭ ধরে গাড়ী ছুটে চলল। হলদুয়ানী শহরের রাস্তাঘাট যথেষ্ট চওড়া এবং উন্নত। রাস্তার দুদিকে সারি সারি দোকান শোরুম। গাড়ী ক্রমে হলদুয়ানী শহর পেরিয়ে কাঠগোদাম স্টেশনকে ডানপাশে অতিক্রম করে ধরল পাহাড়ি রাস্তা। ক্রমে ক্রমে জেলীকোট, ভাওয়ালী, গরমপানি পেরিয়ে বিকেল সাড়ে পাঁচটা নাগাদ গাড়ি এসে থামল আলমোড়া শহরের এক তিন মাথার মোড়ে। এখান থেকে বাঁদিকে একটি রাস্তা সোজা কোশী হয়ে চলে গেছে গোয়ালদাম (১৯৪০ মি.)-এর দিকে। আর অন্য একটি রাস্তা সোজা আলমোড়া শহরকে অতিক্রম করে চলে গেছে বাগেশ্বর শহর। এখানে গাড়ি বদল হবে। কারণ এই গাড়ির আলমোড়া পেরোনোর অনুমতি নেই। এ পথে বছরের এই সময় যাত্রীর সংখ্যা কম থাকায় দীর্ঘ দেড় ঘন্টা অপেক্ষার পর আলমোড়ার গাড়ি মিলল।

আবার শুরু হল রাতের অন্ধকারে পাহাড়ি পথে এগিয়ে চলা। অবশেষে রাত সাড়ে ন'টা নাগাদ গাড়ি এসে থামল বাগেশ্বর। হোটেল সিদ্ধার্থ-এর ঘরে মালপত্র রেখে রাতের খাবার খেতে বের হলাম। রাস্তার দুপাশে সারি সারি দোকানপাট আর থাকার হোটেল। দুএকটি এটিএম কাউন্টার ও সাইবার কাফেও চোখে পড়ল। তবে রাত বাড়ায় খাবার দোকান আর হোটেল ছাড়া সব দোকানেরই ঝাঁপ নামানো। বেশিরভাগ হোটেলেই লাস্ট ব্যাজ বসেছে। সেখানে স্থানীয় ড্রাইভার আর লেবারদের ভীড়। অপেক্ষাকৃত ফাঁকা দেখে আমরা একটি হোটেলে ঢুকে সীট দখল করলাম। খাওয়া সেরে হোটেলের বিল মিটিয়ে রাস্তায় এসে দাঁড়ালাম। বাপ্পাদিত্যবাবু আজ বেজায় ক্লান্ত। খাওয়া সেরে সোজা হোটেলের ঘরে চলে গেল। আমি সামনের রাস্তায় ঘুরে রাতের বাগেশ্বরকে দেখতে লাগলাম।

কুমায়ুন হিমালয়ের বুকে বেশ জমজমাট শহর বাগেশ্বর। পিন্ডারী কাফনী তথা সুন্দরডুঙ্গার পথে এটিই শেষ আধুনিক শহর। পাশ দিয়ে বয়ে চলেছে গোমতী নদী। কিছু দূরে হয়েছে গোমতী আর সরযু নদীর সঙ্গম। পূর্বে এ অঞ্চল ছিল নরখাদক বাঘেদের আস্তানা। বাঘ শিকারের প্রয়োজনে বিখ্যাত শিকারী জিম করবেট একদা ঘুরে বেড়াতেন হিমালয়ের এই তরাই অঞ্চলে। সম্ভবত বাঘের প্রতি ভয়ই পরবর্তীকালে ভক্তিতে রূপান্তরিত হওয়ায় প্রতিষ্ঠা হয় বাঘনাথ দেবতার। এখানে সরযু আর গোমতীর সঙ্গমে তাই রয়েছে বাঘনাথের প্রাচীন মন্দির। এখানে পূজিত দেবতা শিবের বাহন বাঘ। এই শহর উত্তর বারাণসী নামেও প্রসিদ্ধ। বর্তমানে এখানে আধুনিক শহরের অনেক সুবিধাই উপলব্ধ। সেসময় এখানেই মিলত এপথের শেষ এটিএম কাউন্টার, সাইবার কাফের মতো সুবিধাগুলি। এখানে আসবার আগে শুনেছিলাম বাগেশ্বর থেকে সঙ (৩৭ কিমি.) অবধি শেয়ার জীপ চললেও তারপর পিন্ডারী বা সুন্দরডুঙ্গা অবধি পুরোটাই পায়ে হাঁটা পথ। এখানে আসবার আগে শুনেছিলাম বাগেশ্বর থেকে সঙ (৩৭ কিমি.) অবধি শেয়ার জীপ চললেও তারপর পিন্ডারী বা সুন্দরডুঙ্গা অবধি পুরোটাই পায়ে হাঁটা পথ। হাঁটতে বেড়িয়ে হঠাৎ করেই পথে এক প্রবাসী বাঙালি ভদ্রলোকের সঙ্গে পরিচয় হল। বিগত পঁয়ত্রিশ বছর এই সুদূর উত্তরাঞ্চলের হলদুয়ানিতে এসে পাকাপাকিভাবে রয়েছেন। পেশা মাদুরের ব্যবসা। হলদুয়ানি থেকে মাদুর এনে পাহাড়ের উপরদিককার গ্রামগুলোয় বিক্রি করেন। কথায় কথায় জানালেন যে আজকাল নাকি সঙ-এর পর খিরকীয়া অবধি PWD-র রাস্তা তৈরীর কাজ চলেছে। সে পথে জীপ বুকিং করলে গাড়ী খিরকীয়া অবধি পৌঁছে দেয়। সেক্ষেত্রে আগামীকালই আমরা খাতি পৌঁছে যেতে পারব। তবে রাস্তায় এখনও পিচ পড়েনি ফলে গাড়ী ধীরে চলবে। এদিকে রাত বাড়তে থাকে। শরীরও পথশ্রমে ক্লান্ত। তাই ফিরে যাই হোটেলের ঘরে।

১৯ জুন, ২০১২

গতকাল রাতে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী সকাল সাড়ে দশটা নাগাদ একটি জীপ ভাড়া করে আমাদের নবনিযুক্ত পোর্টার মোহন সিং কাপকোটিকে নিয়ে যাত্রা শুরু হল খিরকীয়ার উদ্দেশে। গাড়ি সরযু নদীর বাম তীর ধরে এগিয়ে চলল। এপথে ভারারী ও সঙ অবধি পিচ বাঁধানো পাকা রাস্তা। রাস্তার ধারে ধারে বাড়ি ঘর দোকানপাট। বাগেশ্বর থেকে প্রায় আঠারো কিলোমিটার পথ পেরিয়ে পড়ল কাপকোট। আমাদের পোর্টার মোহনজীর গ্রাম। তাই ওর নামের শেষে পদবীতে গ্রামের উল্লেখ 'কাপকোটি'। এদিকে বর্ষা না নামায় সরযু প্রায় জলশূন্য এক নালামাত্র। পথের ধারে ধারে ধাপ কেটে চাষাবাদ হচ্ছে। গম, আলু, চাল এখানকার প্রধান ফসল। এছাড়াও বাড়ির সামনের ছোট জমিতে ফলেছে নানান নিত্য প্রয়োজনীয় সব্জী। গাড়ি ক্রমে ভারারী, সঙ পেরিয়ে লোহারক্ষেতের পথ ধরল। সঙ-এর পরেই শুরু হল নির্মীয়মান পাথর আর সুড়কি বিছানো কাঁচা পথ। অসমান পথে গাড়ি লাফিয়ে লাফিয়ে চলতে লাগল। মাঝপথে নামল প্রবল বৃষ্টি। ফলে কর্মী গ্রামের দশ কিলোমিটার আগে পুলবাগারের কাছে সুড়কির কাদায় গাড়ির চাকা গেল বসে। রাস্তার একদিকে গভীর খাদ। গাড়ী না এগোয় না পেছোয়। এদিকে বাইরে সমানে চলেছে বৃষ্টির তান্ডব। বেশিক্ষণ এভাবে খাদের ধারে গাড়ি পড়ে থাকলে পথ ধসে খাদে তলিয়ে যাওয়া বিচিত্র নয়। অগত্যা নেমে গাড়ি ঠেলতে লাগলাম। কিছুক্ষণের কসরতে গাড়ি বিপদসীমার বাইরে এল বটে তবে ড্রাইভার গাড়ি নিয়ে এগোতে চাইল না। রাস্তার অবস্থা বিবেচনা করে হেঁটে পথ চলাই শ্রেয় মনে হল। শুরু হল হাঁটা। পাহাড়ি পাকদন্ডীর শর্টকার্ট পথে চলে খিরকীয়ার দশ কিলোমিটার আগে দেখা মিলল এক চায়ের গুমটির। পথের ধারে একটি ছোট দোকানঘর। আমরা পৌঁছতেই দোকানদার কাঠ জ্বেলে আগুনের ব্যবস্থা করে দিল। বৃষ্টির জলে ভিজে যাওয়া হাত-পা জামা-কাপড় সেঁকতে সেঁকতে এসে গেল গরম চা। এদিকে সন্ধ্যা নেমে এসেছে। হোটেলের মালিক বিনায়ক তার বাড়িতে সেদিনের মতো রাতের খাবার ও মাথা গোঁজার আশ্রয়ের ব্যবস্থা করে দিল। পাহাড়ি পথে এ অতি পরিচিত ঘটনা। কোনো বড় শহরে যাত্রাপথে এ ধরণের আতিথেয়তা আশাই করা যায় না।

২০ জুন, ২০১২

এখানে থাকায় একটা লাভ হল। বিনায়কের মা গতকালই পিন্ডারী থেকে ফিরেছেন। ওঁনার কাছেই জানা গেল আগামী দুদিনের মধ্যেই পিন্ডারী পথের সমস্ত KMVN ও PWD-র গেষ্ট হাউস এই মরশুমের মতো বন্ধ হয়ে যাবে। তখন ওপরে গেলে কোনও আশ্রয় মিলবে না। বাপ্পাদিত্যবাবুর পরিকল্পনা অনুযায়ী অবশ্য বৃদ্ধ গাইড মোহন সিং-এর দেবীকুন্ডের পথের উপযুক্ত শরীরিক সক্ষমতা পরখ করে দেখার জন্য পিন্ডারীর পথকেই আগে বেছে নেওয়া হয়েছিল। অতএব বিনায়কের মায়ের তথ্য অনুযায়ী আমাদের এই দু'দিনের মধ্যেই পিন্ডারী পৌঁছতে হবে। তারপর ঘুরে এসে দেবীকুন্ডের পথে রওনা হওয়া যাবে। সকালের চা জলখাবার পর্ব সেরে এগিয়ে চললাম খাতির উদ্দেশে।

বেলা একটা নাগাদ পৌঁছলাম খাতি। উঠলাম সঙ্গম হোটেলে। দুপুরে ভাল করে স্নান সেরে আর গরম গরম খিচুড়ি খেয়ে হোটেলের সামনের ছোট লনে গিয়ে বসলাম। এখান থেকে খাতির মূল গ্রামটা দেখা যায়। প্রায় সত্তর থেকে আশি ঘর লোকের বাস এই খাতি গ্রামে। গ্রামে রয়েছে একটি মাধ্যমিক স্কুল। এখানে একটি সরকারি হাসপাতালও তৈরী হচ্ছে। যদিও খাতি এ'পথের এক বর্ধিষ্ণু গ্রাম তবুও এখনও অবধি বিদ্যুতের আলো পৌঁছয়নি। সৌরশক্তিই ভরসা। তবে মোবাইল ফোনের টাওয়ার এখানে ধরে। এখানকার মানুষের মূল পেশা চাষাবাদ ও পশুপালন এবং মরশুমে টুরিষ্টদের দেখাশোনা। হোটেলের লনে বসেই দূরে চোখে পড়ে গ্রামের কালী মন্দিরটি। কুমায়ূন অঞ্চলে বহু স্থানেই কালী মন্দির দেখা যায়। তবে দেবী নন্দার দেশে গ্রাম বাংলার এই দেবীর পূজা কিভাবে এবং কবে থেকে শুরু হয়েছিল তা এখানকার সাধারণ মানুষ মনে করতে পারে না। তারা তাদের বাপ-ঠাকুরদার আমল থেকেই এই দেবীর পূজার প্রচলন দেখে আসছে। গ্রামের পশ্চাদপটে দিগন্তে মাথা তুলে দাঁড়িয়ে মাইকতোলি শৃঙ্গরাশি। খাতি আসবার পথে খিরকীয়ার পরে আরও তিনটি গ্রাম পার হতে হয়েছে উমলা, জয়কুনি, দাউ। উমলায় একটি প্রাথমিক স্কুল রয়েছে। আসবার সময় পথের ধারেই স্কুলটি নজরে পড়ে। জয়কুনি গ্রামটি বেশ পরিপাটি। থাকার সুন্দর বন্দোবস্ত রয়েছে। রয়েছে বাঙালী খাবারের ব্যবস্থা। আবহাওয়া পরিষ্কার থাকলে এখান থেকে দূরে দেখা যায় জাতোলী গ্রাম। দাউ থেকেই একটি রাস্তা খাতির নির্মীয়মান হাসপাতালটির পাশ দিয়ে রিটং হয়ে চলে গেছে জাতোলির পথে। সূর্যাস্তের সঙ্গে সঙ্গেই ঘনিয়ে এল রাতের অন্ধকার। পথঘাট তথা গোটা গ্রামটাই তলিয়ে গেল গাঢ় অন্ধকারে। আমাদের আগামীকাল সকালে পিন্ডারীর পথে রওনা হওয়ার কথা। এদিকে ঘরের সৌরলন্ঠনের আলো ক্রমে ক্ষীণ হয়ে আসতে লাগল। ফলে দ্রুত আহারাদি সেরে শয্যাগ্রহণ করতে হল।

২১ জুন, ২০১২

সকালে স্নান সেরে তৈরী হয়ে বের হতে হতে সাতটা বেজে গেল। খাতি গ্রামের পাশ দিয়ে রাস্তা গেছে সোজা পিন্ডারীর দিকে। পথের ধারে ধারে আখরোট, বাঁশ আর বার্চের জঙ্গল। পিন্ডার নদকে বাঁ হাতে রেখে আমরা এগিয়ে চললাম। রাস্তা কখনও চড়াই কখনও উৎরাই। এভাবে পাঁচ কিলোমিটার যাওয়ার পর পথের ধারে চোখে পড়ল একটি চায়ের গুমটি।। জায়গার নাম মাল্লাধৌর। সেসময় সেখানে যাত্রীদের থাকবার বন্দোবস্ত থাকতে দেখেছি। চরিদিকে অরণ্যঘেরা এক শান্ত নিরিবিলি পরিবেশ। আগে জানলে খাতিতে না থেকে এখানেই থাকতাম। দোকানে বসে চা পান ও খানিক বিশ্রামের পর আবার শুরু হল পথ চলা। পিন্ডার নদের ওপর কাঠের ব্রীজ পেরিয়ে এগিয়ে চললাম দোয়ালির দিকে।


পিন্ডারীর পথে পিন্ডার নদের পাড়ে জঙ্গলে ঘেরা মান্নাধোরের চায়ের ছাউনী ও ট্রেকারস্ হাট।

এবার পিন্ডার আমাদের ডানহাতে। রাস্তা পরিষ্কার। শুধু কখনও চড়াই তো পরক্ষণেই উৎরাই। আর ডাইনে আমাদের গতির বিপরীতে প্রবল বেগে বয়ে চলেছে পিন্ডার নদ। একেই কর্ণপ্রয়াগে দেখেছি অলকানন্দার সঙ্গে মিলিত হতে। অবশেষে বেলা সাড়ে বারোটা নাগাদ এসে পৌঁছলাম দোয়ালি। খাতি থেকে দোয়ালি ১১ কিলোমিটার। আজ সারাটা দিন পথ দেখিয়ে এনেছে একটা কুকুর। কখনও আমাদের সকলের আগে কখনও বা দলের পিছিয়ে পড়া মানুষটির পাশে পাশে থেকে সজাগ প্রহরীর মতো আমাদের পৌঁছে দিল দোয়ালি অবধি। এখানে PWD-র রেস্টহাউসের পাশের দোকানে খিচুড়ি খেয়ে আবার আমরা এগিয়ে চললাম।


পিন্ডারীর পথে দূরে দোয়ালির PWD-র গেস্টহাউস।


দোয়ালিতে PWD-র গেস্টহাউস।

আমাদের পরবর্তী গন্তব্য ৫ কিলোমিটার দূরে পুরকীয়ার উদ্দেশে। আজ সেখানেই রত্রিবাস করে কাল সকালে পিন্ডারী দর্শনের পরিকল্পনা। সঙ্গের কুকুরটিও আমাদের কাছ থেকে কিছু খেয়ে অদৃশ্য হল ওর ডেরার উদ্দেশ্যে। এটাই ওর কাজ। এ অঞ্চলে আসা পথিককে ও পথ চিনিয়ে নিয়ে আসে। তাতে পথিক খুশি হয়ে যা দেয় তাতেই খুশি হয়ে ফিরে যায়। হিমালয়ের অনেক অঞ্চলেই কুকুরদের মধ্যে এই স্বভাবটা লক্ষ্য করা যায়। দোয়ালিতে পিন্ডারে এসে মিশেছে কাফনী নদী। দুই নদীর মিলনস্থল বলে এই স্থানের নাম দোয়ালি।


দোয়ালিতে কাফনী আর পিন্ডারের সঙ্গম।

দোয়ালিতে প্রবেশ করার সময় একটি কাঠের সেতু দিয়ে পিন্ডার নদকে পার হয়ে এসেছি। তাই পুরকীয়ার পথে পিন্ডার আমাদের বাঁ হাতে। পথের দু'দিকে সবুজ ঘাসের গালিচায় মোড়া উঁচু পাহাড়ের প্রহরা। তার মাঝে পাহাড়ের গা বেয়ে চলে গেছে সরু পথরেখা। রাস্তা আগের মতই বিদজ্জনক না হলেও চড়াই-উৎরাই। আর নীচে বয়ে চলেছে পিন্ডারের জলস্রোত। যেদিকে তাকাও সবুজ ঘাসে মোড়া প্রান্তর।


আঁকাবাঁকা পাহাড়ি পথ। পাশে বয়ে চলা পিন্ডার।


পুরকীয়ার KMVN-এর গেস্টহাউস।

অবশেষে পৌঁছানো গেল পুরকীয়া। ঘড়িতে সাড়ে তিনটে। থাকার বন্দোবস্ত হল KMVN-এর গেস্টহাউসে। এখানে জেনারেটরের সুবিধা থাকায় রাতে ঘন্টাখানেকের জন্য মোবাইল ও ক্যামেরার ব্যাটারী চার্জ করে নেওয়া গেল। রাতে নটা পর্যন্ত চলল KMVN-এর কেয়ারটেকার আর মোহনজীর সঙ্গে আড্ডা। বাইরে বেশ ঠান্ডা। তারই মধ্যে গেষ্টহাউসের চৌকিদার আমাদের জন্য গরম গরম রুটি আর আলুর তরকারি বানিয়ে আনল। জানাল আগামীকালই গেস্টহাউস বন্ধ করে এ'বছরের মতো ওরা নিচে নেমে যাবে তাই এর অধিক কিছু নেই। সারাদিন পথ চলে ক্লান্ত শরীরে আমাদের কাছে এটাই তখন অমৃত। সেসময় এপথে অনেকেই এখান থেকে আরও কিছু পথ পিন্ডারীর দিকে এগিয়ে পাইলট বাবার আশ্রমে রাত্রিবাস করত। সেক্ষেত্রে সকালে অনেক আগেই পৌঁছানো সম্ভব পিন্ডারী জিরো পয়েন্টে। এখান থেকে পিন্ডারী জিরো পয়েন্ট ৭ কিলোমিটার। অর্থাৎ আমাদের কাল অনেক ভোরে বের হতে হবে। রাতের আহারাদি পর্ব সেরে লেপের নীচে তলিয়ে গেলাম গভীর নিদ্রায়।

২২ জুন, ২০১২

ভোর পাঁচটা নাগাদ মোহনজীর ডাকে ঘুম ভাঙল। সঙ্গে সঙ্গে চা রেডি। তবে আকাশের দিকে তাকিয়ে চিন্তায় পড়ে গেলাম। আকাশ মেঘাচ্ছন্ন। প্রাতকৃত্য সেরে তৈরী হয়ে যখন পিন্ডারী জিরো পয়েন্টের উদ্দেশে পা বাড়ালাম তখন ঘড়িতে সকাল ছটা। মেঘ তখনও কাটেনি। তবে কেয়ারটেকার ভদ্রলোক জানালেন কিছুক্ষণ পরেই নাকি এ মেঘ কেটে যাবে। আমরাও সেই আশায় এগিয়ে চললাম জিরো পয়েন্টের দিকে।


পিন্ডারের পথে পার হতে হল খরস্রোতা পাহাড়ি জলধারা।

এরপর গোটা পথই পিন্ডার আমাদের বাঁদিকে। ডাইনে বাঁয়ে সবুজ ঘাসে মোড়া উঁচু পাহাড় আর বুগিয়ালের রাজত্ব। আর মাঝে মাঝে তারই কোনও স্থান থেকে নির্গত ঝরনা প্রচন্ড বেগে আছড়ে পড়ছে নীচে বয়ে চলা পিন্ডারের বুকে। কোথাও বা কোনও দুরন্ত ঝরণা মাঝপথে জমে সাদা গ্লেসিয়ারের স্তর হয়ে নেমে এসেছে নীচে পিন্ডারের বুকে। এ যেন কোনও চিত্রকরের আঁকা পটের ওপর দিয়ে এগিয়ে চলেছি। সারাটা পথে শব্দ বলতে শোনা যায় কেবল পিন্ডারের জলস্রোতের গর্জন। পথের দু'পাশে ফুটে রয়েছে অসংখ্য রঙীন জংলী ফুল।


পিন্ডারীর পথে মেষচারণ ক্ষেত্র ও মেষপালকদের আস্তানা। অদূরে বরফের স্তরে রূপান্তরিত পাহাড়ি ঝরণার ধারা।


পথপ্রান্তে উঁকি দেয় রঙীন পাহাড়ি ফুল।


পিন্ডারীর পথে বরফের প্যাচ।


নীচে বয়ে চলা পিন্ডার। মাথা তুললে ওপরে নন্দাখাত।


পিন্ডারীর এক কিলোমিটার আগে পাইলট বাবার আশ্রম।

এভাবেই কিছুদূর যাওয়ার পর সামনে মাথা তুলতেই দৃশ্যপটে দেখা গেল তুষারে মোড়া শ্বেতশুভ্র নন্দাখাত (৬৬১৬ মি.)। আকাশ ধীরে ধীরে যতই পরিষ্কার হতে থাকে ততই সামনের চূড়াগুলি দৃশ্যমান হতে থাকে। একসময় দূর থেকে দেখা দেয় পিন্ডারী গ্লেসিয়ার। নন্দাদেবী ও নন্দাখাত পর্বতমালার মধ্য দিয়ে নেমে আসা এই হিমবাহর স্নাউট থেকেই পিন্ডার নদের উৎপত্তি।

কিছুক্ষণের মধ্যেই আমরা পৌঁছই এক আশ্রমের সামনে। এটি স্বামী ধর্মানন্দের 'নন্দা শিব শক্তিপীঠ আশ্রম'। 'পাইলট বাবার আশ্রম' বলেও এর পরিচিতি আছে। তবে মন্দিরের দরজায় তালা ঝুলছে। আশ্রমের স্বামীজিরা হয়ত নীচে গিয়ে থাকবেন। আমরা আশ্রমকে ডান হাতে রেখে এগিয়ে চললাম পিন্ডারী জিরো পয়েন্টের দিকে। এখান থেকে জিরো পয়েন্ট আরও এক কিলোমিটার। পথে পড়ল একটি নালা। সেটা অতিক্রম করে হাল্কা চড়াই পথে এক বুগিয়ালের উপর দিয়ে এগিয়ে চললাম। সারাটা পথের যেদিকে তাকাও সবুজ বুগিয়াল। ঘাসের মাঝে মাঝে উঁকি মারছে ছোট ছোট জংলী ফুলের দল। এ যেন কোনও স্বপ্নপুরীর পথ।


পিন্ডারী জিরো পয়েন্ট। নীচে পিন্ডারের উৎসমুখ।

অবশেষে ঘড়িতে সকাল দশটা। লক্ষ্য করলাম সামনের পথ সরু হয়ে হঠাৎ করে যেন ধসে নীচে নেমে গেছে। ধসের মুখে পৌঁছাতেই ভেতরটা কেঁপে উঠল। আমরা পিন্ডারী জিরো পয়েন্টে (৩৩৬০ মি.) দাঁড়িয়ে। প্রায় চারশো ফুট খাড়া খাদ নীচে নেমে গেছে। আর সেই খাদের এক প্রান্ত থেকে গোমুখাকৃতি এক তুষার গহ্বর থেকে নির্গত হচ্ছে পিন্ডার নদের ধারা। ঠিক যেমন গোমুখে ভাগীরথীর উৎসে দেখেছি। তবে পার্থক্য নির্গত জলধারার বেগে। এখানে জলের বেগ গোমুখের ন্যায় প্রবল নয়। তুষার গহ্বরের উপরে বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে গ্লেসিয়ারের রাজত্ব। প্রায় পাঁচ মাইল লম্বা আর পাঁচশো ফুট চওড়া এই হিমবাহে রয়েছে অজস্র মৃত্যুগহ্বর। ১৮৩০ সালে আলমোড়ার প্রথম বৃটিশ কমিশনার মিষ্টার ট্রেইল এই হিমবাহ পেরিয়ে নন্দাদেবী ও নন্দাকোট পর্বতমালার মাঝের এক গিরিবর্ত অতিক্রম করেন। সেসময় যার নাম ছিল পিন্ডারী কাঁড়া (১৭,৪০০ ফুট)। পরবর্তীতে তাঁরই নামে এই পথের নাম বদলে হয় ট্রেইল পাশ (Trail Pass)। পিন্ডারী হিমবাহের একপাশ দিয়ে এই পথ চলে গেছে মিলাম গ্লেসিয়ার অবধি। এ পথ অতিক্রম করা সাধারণ মানুষের অসাধ্য। ১৮৩০-এর পর আজ অবধি প্রায় ৯০টি দলের এপথে অভিযানের উল্লেখ পাওয়া গেলেও এর মধ্যে মাত্র ২০টি দলের অভিযানে সাফল্য এসেছে। বাঙালীরাও এ ব্যাপারে পিছিয়ে নেই। ২০০৯ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে সংগঠিত অভিযানে অসীম বিপদের ঝুঁকি নিয়ে যাঁরা এ পথ পার হয়েছেন তার মধ্যে রয়েছে বেশকিছু বাঙালি দল [১]।


জিরো পয়েন্ট থেকে বহু নীচে বয়ে চলা সদ্যজাত পিন্ডার।

হিমবাহের ঘনত্বের দিক থেকে হিমালয়ের স্থান পৃথিবীর মেরু অঞ্চলের ঠিক পরেই। 'জিওলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়া'র প্রকাশিত একটি গবেষণা রিপোর্ট অনুযায়ী কেবলমাত্র ভারতীয় ভূখন্ডের অন্তর্ভুক্ত হিমালয় অঞ্চলে মোট ১,৫৭৫টি হিমবাহের সন্ধান পাওয়া গিয়েছে [২]। তবে ভৌগোলিক অবস্থান সাপেক্ষে সব ক'টি হিমবাহের ওপর নজরদারি সম্ভব নয়। কতিপয় যে ক'টি হিমবাহের ওপর নিরন্তর পর্যবেক্ষণ সম্ভব তার মধ্যে গঙ্গোত্রী হিমবাহ, পিন্ডারী হিমবাহ, মিলাম হিমবাহ, চোরাবারি হিমবাহ, সতোপন্থ হিমবাহ, পার্বতী হিমবাহ, কোলাহাই হিমবাহ নামগুলি হিমালয় পর্যটক মহলে অতি পরিচিত নাম। বর্তমানে কারিগরী উন্নতির যুগে স্যাটেলাইটের সহায়তায় অত্যাধুনিক 'রিমোট সেনসিং' পদ্ধতির প্রয়োগে এই হিমবাহগুলির গতিবিধির ওপর সর্বক্ষণ নজরদারি সম্ভব হয়েছে। এই হিমবাহের গতিপ্রকৃতির ওপর নির্ভর করেই পৃথিবীর তাপমাত্রা হ্রাসবৃদ্ধির একটি সঠিক ধারণা পাওয়া সম্ভব। প্রকাশিত গবেষণা রিপোর্ট অনুযায়ী পিন্ডারী হিমবাহ ১৮৪৫ থেকে ১৯৬৬ সাল অবধি ১২১ বছরে মোট ২৮৪০ মিটার এবং ১৯৬৬ থেকে ২০১০ সাল অবধি ৪৪ বছরে মোট ৩৭৯ মিটার পিছিয়ে গিয়েছে [৩, ৪]। সম্প্রতি 'Department of Science and Technology (DST)'-র অর্থানুকুল্যে একটি গবেষণা সংগঠিত হয় যা ২০১৯ সালে 'ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল অফ ক্লাইমেটোলজি' নামক একটি জার্নালে প্রকাশিত হয় [৫]। তাতে মুদ্রিত পিন্ডারী হিমবাহের ১৮৯০ এবং ২০১৭-র একটি তুলনামূলক চিত্র দেখলে হিমবাহের এই ক্ষয়ের গতি সম্বন্ধে যথেষ্টই ভীতির উদ্রেগ হয়।

সভ্যতার অগ্রগতির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে হিমবাহের গলে যাওয়ার ঘটনা ক্রমেই ঘটে চলেছে। এই পিন্ডারী হিমবাহের গলা বরফ পিন্ডার নদের জলের মূল উৎস। আর নিচে সমতলে বয়ে চলা গঙ্গার জলের একটি উল্লেখযোগ্য উৎস এই পিন্ডার নদ। হিমবাহের এই দ্রুত ক্ষয় ভবিষ্যতের তীব্র জল সংকটের নির্দেশ দিচ্ছে। এখনই সতর্ক না হলে ভবিষ্যতের দিনগুলি ভয়ঙ্কর হতে চলেছে।

KMVN-এর কেয়ারটেকার সাহেবের কথা সত্যিই ফলে গেল। চারিদিক রোদ ঝলমল করছে। নীল আকাশের বুকে সাদা মেঘের আনাগোনা। মনেই হয় না সকালে আকাশ মেঘলা ছিল। ক্রমে দূরের শৃঙ্গগুলি দেখা যেতে লাগল। পিন্ডারী উৎসের দিকে মুখ করে দাঁড়িয়ে আমাদের বাঁদিক থেকে এক এক করে দেখা যেতে লাগল লামচূড, বালজৌরী কল, বালজৌরী (৫৯৭০ মি.), পানওয়ালিদোয়ার (৬৬৬৩ মি.), নন্দাখাত (৬৬১৬ মি.), ছাঙ্গুস (৬৩২২ মি.), নন্দাকোট (৬৮৮০ মি.), নন্দাভানর (৬১০৪ মি.)। কিন্তু আধঘন্টার বেশী এ আবহাওয়া রইল না। হঠাৎ করেই কোথা থেকে যেন সকালের মেঘেরা ফিরে আসতে লাগল। একে একে সব ক'টি চূড়াই আবার চলে গেল দৃষ্টির আড়ালে। জুন মাসের প্রায় শেষ। বর্ষা যেকোনো সময়ই প্রবল আকার নিতে পারে। তাই মোহনজীর পরামর্শে সবাই মিলে ফেরার পথ ধরলাম।

২৩ জুন, ২০১২

গতকাল পিন্ডারী জিরো পয়েন্ট থেকে দোয়ালি ফিরতে ফিরতে বেলা আড়াইটে বেজে গেল। অবশ্য মাঝে পুরকীয়ায় এক ঘণ্টা লাঞ্চ ব্রেক ছিল KMVN-এর গেষ্ট হাউসে। দোয়ালিতে রাতে PWD-র গেষ্টহাউসে থাকবার ব্যবস্থা হয়েছিল। বহু পুরোনো সে গেস্টহাউস। সারা রাত সেখানে বিছানায় ছাড়পোকার কামড় খেয়ে কোনওক্রমে সে রাত কেটেছে। সকাল সাতটায় দোয়ালি থেকে পথ চলা শুরু করে বেলা এগারোটা নাগাদ খাতি এসে পৌঁছেছি। পথে মাল্লাধৌরে চায়ের গুমটিতে পুনে থেকে আসা একটা টিমের সঙ্গে দেখা হল। ওরা দেবীকুন্ডের পথ থেকে ফিরে পিন্ডারী চলেছে। ওরা কুন্ডে পৌঁছতে পারেনি। ওদের গাইড জানাল যে উপযুক্ত পর্বতারোহনের সরঞ্জাম ছাড়া নাকি এ মুহূর্তে কুন্ডের কাছে পৌঁছনো অসম্ভব। ওরা তাই দূর থেকে কুন্ডের অঞ্চলটি দর্শন করেই ফিরে এসেছে। ওদের দিন কয়েক আগেও নাকি একটি কলকাতা ও একটি মুম্বাইয়ের দল এমনভাবেই ফিরে গেছে। কুন্ডে পৌঁছবার সঠিক পথের সন্ধানের অভাবে। ব্যাপারটা আমাদের যথেষ্ঠই ভাবিয়ে তুলল। খাতি গ্রামের এক দোকানে দুপুরের খাওয়া সেরে একরাশ অনিশ্চয়তার মধ্যে ধরলাম জাতোলির পথ।


খাতি ফেরার পথে নীচে জঙ্গল ঘেরা মারাধৌরের চায়ের গুমটি। দূরে পিন্ডারের পাড় ধরে রাস্তা চলে গেছে খাতির দিকে।


References:

1. https://en.wikipedia.org/wiki/Traill%27s_Pass.

2. Sangewar, C. V., Shukla, S. P., & Singh, R. K. (2009). Inventory of the Himalayan Glaciers; Special Publication no. 34, Geological Survey of India. IISN. 1:0254-0436.

3. Vohra C. P. (1981). Himalayan Glaciers. In: Lal J. S., Moddie A. D., editors. The Himalaya: The aspects of change. Delhi: Oxford University Press; p. 138-151.

4. Rameshwar Bali, S. Nawaz Ali, K. K. Agarwal, Saurabh Kumar Rastogi, Kalyan Krishna, Pradeep Srivastava, Chronology of late Quaternary Glaciation in the Pindar Valley, Alaknanda Basin, Central Himalaya (India), Journal of Asian Earth Sciences, Volume 66, Pages 224-233, ISSN 1367-9120.

5. Singh, Nilendu & Singhal, Mohit & Chhikara, Sudershan & Karakoti, Indira & Chauhan, Dr. Pankaj & Dobhal, Devansh. (2019). Radiation and energy balance dynamics over a rapidly receding glacier in the central Himalaya. International Journal of Climatology. 40.10.1002/joc.6218.

আলোকচিত্রঃ লেখক।