প্রবন্ধ ও নিবন্ধ

ভূতের বেগারঃ উলটো বুঝলি রাম



রামকৃষ্ণ ভট্টাচার্য


একটা আদর্শ পরিস্থিতির কথা ভাবা যাক। মার্কস-এর 'মজুরি ও পুঁজি' অবলম্বনে সুভাষ মুখোপাধ্যায় লিখলেন 'ভূতের বেগার' (১৯৫৪)। সুভাষের বইটি দেখে খুব খুশি হলেন কমিউনিস্ট পার্টির রাজ্য নেতারা। ঠিক হলোঃ বাঙলায় সমস্ত কারখানা-এলাকায় পার্টি শাখার সাক্ষর মজুর-সদস্যদের বইটি পড়ানো হবে। তারপর জানতে চাওয়া হবেঃ বুঝতে অসুবিধে হলো কি না। স্রেফ 'ভালো লাগল' বললে চলবে না। সবশেষে সুভাষকে ডেকে বলা হবেঃ যাঁদের জন্যে তুমি বইটি লিখেছিলে এই হলো তাঁদের মত। সুভাষও সেই অনুযায়ী রদবদল করবেন। দরকার পড়লে ঢেলে সাজাবেন গোটা বইটাই।

কিন্তু হায়! বাস্তবে হলো ঠিক এর উলটো। কথা নেই বার্তা নেই, হঠাৎ একদিন পার্টির দৈনিক মুখপত্র, 'স্বাধীনতা'-য় ভূতের বেগার-এর সমালোচনা বেরল (১৭ পৌষ, ১৩৬১; ২ জানুয়ারি, ১৯৫৫)। যে-সে কোনো লোক নন, সমালোচক খোদ 'সম্পাদকমণ্ডলী'।[১] ওয়াকিবহাল লোকদের কাছে জানা যায়, সেটি আসলে লিখেছিলেন পার্টির রাজ্য কমিটির সদস্য ও 'স্বাধীনতা'-র সম্পাদকমণ্ডলীর সভ্য, সুশীতল রায়চৌধুরী।[১] জলিমোহন কল ও আরও কয়েকজন মনে করেন, সুশীতলবাবু যদি উদ্যোগ নিয়ে বইটিকে পার্টির রাজ্য নেতৃত্বের নজরে না আনতেন, তাহলে কেউই হয়তো ব্যাপারটা খেয়াল করতেন না।[২]

এ বিষয়ে কল-এর বয়ান অবশ্য সতীন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর বয়ানের সঙ্গে পুরোটা মেলে না।[৩] পার্টির রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সভায় বইটি নিয়ে আগে বিতর্ক হয়েছিল, তারপরে 'স্বাধীনতা'-য় বিরূপ সমালোচনা বেরল - নাকি আগে সমালোচনা বেরল, তারপর পার্টির সম্পাদকমণ্ডলী বইটি নিয়ে তার অমত জানাল? তবে সতীনবাবু এর সঙ্গে জড়িয়েছেন প্রমোদ দাশগুপ্তর নাম; সুশীতল রায়চৌধুরীর কথা একবারও, এমনকি ঠারে-ঠোরেও, বলেন নিঃ

প্রমোদ দাশগুপ্ত মহাশয় তখন 'স্বাধীনতা'র পরিচালনা করেন; সাংস্কৃতিক ফ্রন্টের-ও তখন তিনি ভারপ্রাপ্ত ছিলেন। গুজব শুনেছিলাম 'ভূতের বেগার' নিয়ে যেসব কাণ্ডকারখানা হয়েছিল তার মগজ ছিল তাঁরই।[৪]

মোহিত সেন তাঁর সদ্য-প্রকাশিত স্মৃতিকথায় আরও এক পা এগিয়ে লিখেছেনঃ "দেবীপ্রসাদ চট্টোপাধ্যায় ও সুভাষ মুখোপাধ্যায়কে পশ্চিমবঙ্গের পার্টি নেতৃত্ব প্রকাশ্যেই নিন্দাবাদ (সেন্সর) করেছিল।"[৫] তখনকার রাজ্য কমিটির সম্পাদক, জ্যোতি বসু নাকি মোহিত সেন ও আর কয়েকজনের কাছে বলেন যে, তিনি এর বিরোধী ছিলেন; ঐ দুই 'উল্লেখযোগ্য বুদ্ধিজীবী' খুবই 'অনুগত কমিউনিস্ট', আরও বুঝেসুঝে তাঁদের ব্যাপারটি বিবেচনা করা উচিত ছিল। কিন্তু জ্যোতিবাবু এও খোলাখুলি স্বীকার করেনঃ পার্টির রাজ্যস্তরের নেতা হয়েও তিনি বোঝেন নি বিবাদটা কী নিয়ে! সিদ্ধান্তর ভার তিনিই তাই প্রমোদ দাশগুপ্তর ওপর ছেড়ে দেন। (পৃ. ২২৪)

ঠিক কী ঘটেছিল সে-নিয়ে পুরনো কাসুন্দি ঘেঁটে আর লাভ নেই। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক, কলকাতার এক নেতৃত্বস্থানীয় পার্টি কর্মী জানালেনঃ প্রকাশ্য নিন্দাবাদের কথাটা ডাহা ভুল। দেবীপ্রসাদ চট্টোপাধ্যায়ের কাছে আমিও যা শুনেছি, তাতে নিন্দাবাদের কথা আসে নি। সুভাষ মুখোপাধ্যায়ও 'ভূতের বেগার'-এর নতুন (২০০০) সংস্করণের ভূমিকায় লিখেছেনঃ "পার্টির সতীর্থরা সেদিন আমার পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। ফলে, আমি জলে পড়িনি। কিন্তু প্রকাশক বেচারার পুরো টাকাটাই জলে গিয়েছিল। এরপর আর ন্যাড়া বেলতলায় যায়নি।" (পৃ. ৮)

ন্যাড়া যে আর বেলতলায় গেল না - এতে ক্ষতি হলো কার? 'স্বাধীনতা'-র সমালোচনা আর পার্টির রাজ্য কমিটির বিবৃতি (১৮ ও ২৫ সেপ্টেম্বর, ১৯৫৫) পড়ে এখন হাসি পায়। সুভাষকে যদি আরও এই ধরনের বই লিখতে উৎসাহ দেওয়া হতো, সত্যিকারের ভুলচুক থাকলে ধরিয়ে দেওয়া হতো - তাতে লাভ হতো পার্টির, লাভ হতো বাঙালি পাঠকের, লাভ হতো বাঙলা সাহিত্যের। কিন্তু 'ভূত' শব্দটি নিয়েই পার্টি নেতাদের প্রধান আপত্তি, কারণ, এতে নাকি কুসংস্কারকে প্রশ্রয় দেওয়া হচ্ছে। ব্যাপারটা অতীব হাস্যকর। কমিউনিস্ট পার্টির ইশতেহার (১৮৪৮)-এর সূচনাতেই মার্কস-এঙ্গেলস লিখেছিলেনঃ "ইওরোপকে একটা ভূত তাড়া করছে - কমিউনিজমের ভূত।"[৬] এর মানে কি এই যে মার্কস-এঙ্গেলস ভূতে বিশ্বাস করতেন? কোনো শব্দের আক্ষরিক অর্থ আর আলঙ্কারিক অর্থ বোঝার মতো বুদ্ধিও কি পার্টির বাঘা বাঘা নেতা ও 'স্বাধীনতা'-র দুঁদে সম্পাদকের ছিল না?[৭]

আর মার্কসবাদ থেকে বিচ্যুতি? এ ব্যাপারে যা চাপান-উতোর হয়েছিল তাও সমান হাস্যকর। সাধারণ মানুষের বোঝার মতো করে প্রাথমিক বই লিখতে গেলে বিষয়ের খানিক সরলীকরণ হবেই। লেখার কথা যদি ছেড়েও দেওয়া হয়, মুখে মুখে তাড়াতাড়ি কিছু বোঝাতে হলে, জরুরি কথাও বাদ পড়ে যায়। অল্প হলেও এসব ব্যাপারে যাঁদের কিছুমাত্র অভিজ্ঞতা আছে তাঁরাই এ কথা বুঝবেন। সুভাষের সপক্ষে লিখতে গিয়ে সতীনবাবুও একটু তঞ্চকতা করেছিলেন। যেমন, চলন্তিকা থেকে 'গতর' শব্দটির অর্থ উদ্ধৃত করার সময়ে। পার্টির রাজ্য কমিটি সেটি ঠিক ধরে ফেলেন। তবে 'স্বাধীনতা'-র সম্পাদকমণ্ডলী ও পার্টির রাজ্য কমিটিও একই দোষে দোষী।[৮]

ভূতের বেগার বিতর্কে কিছু খুচরো মজাও পাওয়া যায়। 'স্বাধীনতা'-সম্পাদকমণ্ডলীর সমালোচনায় একটি বাক্য ছিলঃ "তা ছাড়া কয়েকটি স্থানে ইংরেজির অনুবাদ করতে যেয়েও বেশ কিছু ভুল হয়েছে।" সতীনবাবু এটি উদ্ধৃত করার সময়ে 'যেয়েও' শব্দটির পাশে '(sic)', অর্থাৎ 'তা-ই আছে' লিখেছিলেন। পার্টির পশ্চিমবঙ্গ কমিটির মন্তব্যে আর 'যেয়ে' নেই, কিন্তু তাঁরা যে ব্যাপারটায় খুবই বিব্রত তা বোঝা যায়। তাঁরা লিখেছেনঃ "শ্রী সুভাষ মুখোপাধ্যায় মৌলিক কিছু করতে গিয়ে নিজে তো মুশকিলে পড়েছেনই, আমাদেরও মুশকিলে ফেলেছেন। তিনি একজন খ্যাতিমান কবি, বাঙলাভাষার একজন খ্যাতিমান গদ্যলেখকও। একেবারে খাস নদীয়া জিলার বাসিন্দা তিনি। তবুও তিনি তাঁর পুস্তকে বাগধারার অপপ্রয়োগের পর অপপ্রয়োগ কিসের প্রভাবে করে গেলেন?"

সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের মামার বাড়ি কেষ্টনগরে, দিদির শ্বশুরবাড়ি শান্তিপুরে। তার সুবাদে তিনি 'খাস নদীয়া জিলার বাসিন্দা' হয়ে গেলেন!

তবে এগুলো বড় কথা নয়। সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের মতো গোপাল হালদারকেও একবার পার্টির কোপে পড়তে হয়েছিল। উপলক্ষ্য ছিল সতীনাথ ভাদুড়ীর 'জাগরী' উপন্যাসের অনুকূল আলোচনা।[৯] রাজ্য সম্মেলনেও (১৯৫৬) এই নিয়ে আপত্তি ওঠে। নতুন নির্বাচিত প্রাদেশিক কমিটি তার বিচারে বসেন। গোলাম কুদ্দুস ছিলেন এই কমিটির সদস্য। গোপাল হালদারের লেখাটি সম্পর্কে তাঁরও আপত্তি ছিল। সে-বিচারের ফল কী দাঁড়িয়েছিল সেটি তাঁর কাছ থেকেই শোনা যাকঃ

নেতারা গোপালদা'র সামনে মুখ খুলতে ইতঃস্তত [ইতস্তত] করছিলেন। অবশেষে একজন বললেন, কমরেড হালদার আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন মানুষ, তাকে [তাঁকে] পার্টি থেকে বহিষ্কার বা সাসপেন্ড বা 'সেন্সর' করার প্রশ্নই ওঠে না, আমরা শুধু তাঁকে তাঁর মতামত পুনর্বিবেচনা করার অনুরোধ করতে পারি।[১০]

পার্টির তরফে এই সংযম সত্যিই তারিফ করার মতো। কুদ্দুস জানাচ্ছেন, "যবনিকাপাত হলো এবং আমি হাঁপ ছেড়ে বাঁচলাম। গোপালদা বাইরে কোনো দিন এই নিয়ে উচ্চবাচ্য করেননি, আবার নিজের মত থেকে পিছপাও হননি।" এরপর কুদ্দুস একটি চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়েছেনঃ "আমাদের প্রতিপক্ষ, যাঁরা স্বাধীন সাহিত্যের নামে বুর্জোয়াদের পক্ষাবলম্বন করেন, তাঁদের কাছে আমার নিবেদন এইটুকু যে, তাঁরা কি দেখাতে পারেন কখনো পশ্চিমবঙ্গ কমিউনিস্ট পার্টি স্বাধীনভাবে মতামত প্রকাশের জন্য সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে কোনো কমরেডকে বহিষ্কার করেছে পার্টি থেকে? এমন কি বাম বিচ্যুতির যুগেও [১৯৪৮-৫১]?"

চ্যালেঞ্জটি যাচাই করার মতো তথ্য এই মুহূর্তে আমার হাতে নেই। তবে পার্টির কোনো কোনো নেতা যে অযোগ্য হওয়া সত্ত্বেও যোগ্যতর লোকদের ব্যাপারে কাণ্ডজ্ঞানহীন মতামত দিতেন, মাতব্বরি করতেন - এও তো মিথ্যে নয়।[১১] 'ভূতের বেগার'-এর ব্যাপারে 'স্বাধীনতা'-র তখনকার প্রধান সম্পাদক, ভূপেশচন্দ্র গুপ্ত আর পার্টির রাজ্য কমিটির সম্পাদক, জ্যোতি বসু ও অন্যান্য সদস্য (প্রমোদ দাশগুপ্ত, মুজফ্ফর আহমদ, জলি কল প্রমুখ) যে বড় রকমের ক্ষতি করেছিলেন - এও তো সত্যি। তখন পার্টির অবস্থা - কী সভ্যসংখ্যা, কী জনগণের ওপর প্রভাব, কী পার্টি-সাহিত্য বিক্রি - কোনো দিক দিয়েই সুবিধের নয়। নভেম্বর ১৯৫৪-য় মার্কস-এর 'মজুরি ও পুঁজি' ছাপা হয়েছিল ৩২০০ কপি। পার্টির সপ্তম রাজ্য সম্মেলনের (১৯৫৬) রিপোর্টে দেখা যায়ঃ মার্চ ১৯৫৬ অবধি ছ আনা (৩৭ পয়সা) দামের এই বইটি বিক্রি হয়েছিল মাত্র ৪১০ কপি, পড়ে ছিল ২৭৯০ কপি।[১২] অর্থাৎ 'মজুরি ও পুঁজি'-র মতো প্রাথমিক স্তরের বই পড়তেও পার্টির কর্মী ও দরদিরা খুব একটা উৎসাহ দেখান নি। সেই যুগে 'ভূতের বেগার'-এর মতো বই বেরল, কিন্তু পার্টির নির্দেশে তার প্রচার বন্ধ হয়ে গেল - স্রেফ কিছু অবোধ নেতার বিবেচনার অভাবে - বাঙলার কমিউনিস্টদের পক্ষে এ কি কম লজ্জার?


টীকাঃ

১. 'ভূতের বেগার', প্যাপিরাস সংস্করণ (২০০০)-এর পরিশিষ্ট-এ এ বিষয়ে পুরো বিতর্কটিই ছাপা হয়েছে। এ ছাড়া সতীন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর প্রবন্ধ (গ্রন্থপঞ্জি দ্র.)-টিতেও ঠিকভুল মিশিয়ে কিছু খবর আছে।

২. জলিমোহন কল, পৃ. ২৯৮।

৩. সতীন্দ্রনাথ চক্রবর্তী, পৃ. ২৮৪-৮৭।

৪. ঐ, পৃ. ২৮৬। প্রমোদ দাশগুপ্ত তখন ছিলেন 'স্বাধীনতা'-র ম্যানেজার। 'জনযুদ্ধ'-র যুগেও তিনি ছাপাখানার তদারক করতেন। সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক তখন খারাপ ছিল না। (গদ্যসংগ্রহ, খণ্ড ১, পৃ. ৫৪২-৪৩ দ্র.) ১৯৬১-তে পার্টির নবম রাজ্য সম্মেলন (বর্ধমান) থেকে সাধারণ সম্পাদক হন প্রমোদবাবু।

৫. মোহিত সেন, পৃ. ২২৪।

৬. মস্কো থেকে প্রকাশিত বাঙলা অনুবাদে এটি হয়ে দাঁড়িয়েছেঃ 'ইউরোপ ভূত দেখছে - কমিউনিজমের ভূত'। (পৃ. ৩১) স্যামুএল মূর-এর অনুবাদে ছিলঃ 'A spectre is haunting Europe - the spectre of communism'। (পৃ. ৩০) এটিই অনুমোদিত অনুবাদ, মূল জার্মান-এর সঙ্গে আক্ষরিক ভাবে মেলে। ইডেন ও সেডার পল তাঁদের তর্জমায় 'is haunting'-এর বদলে লিখেছিলেন 'haunts'। জার্মান-এ ক্রিয়ার ঘটমান বর্তমান কাল-এর কোনো আলাদা রূপ নেই। তাই দুটি অনুবাদই সঠিক। বাঙলা অনুবাদটি বরং মূল থেকে সরে গেছে।

৭. লেনিন একবার লিখেছিলেন, "ঈশ্বরে বিশ্বাস করার মতো তত অজ্ঞ নয় এমন লোকও 'ঈশ্বরকে ধন্যবাদ' বলে; এটি একটি প্রথাগত শব্দগুচ্ছ।" (পৃ. ৮৬) আমাদের দেশে কিছু কাঁচা যুক্তিবাদী আছেন; 'কপাল' বা 'ভাগ্য' শব্দটি শুনলেই যাঁদের চোখ কপালে ওঠে। এই হলো লেনিন না-পড়ার কুফল।

৮. রাজ্য কমিটি অবশ্য স্বীকার করেছিলেন 'স্বাধীনতা'-র সম্পাদকমণ্ডলীর সমালোচনায় 'কিছু কিছু ত্রুটি ও দুর্বলতা আছে।' বিশেষ করে 'সারাদিন খাটুনি' কথাটা নিয়ে 'স্বাধীনতা'- র সম্পাদকমণ্ডলী যে একটু বেশি ভেবে ফেলেছিলেন তারও সমালোচনা করা হয়েছে। তবে, শেষ পর্যন্ত রাজ্য কমিটি 'স্বাধীনতা'-র পক্ষেই রায় দেয়।

৯. 'জাগরী'-তে অগস্ট আন্দোলনে কমিউনিস্টদের ভূমিকা সম্পর্কে বিরূপ মনোভাব প্রকাশ পেয়েছিল। গোপাল হালদারও নীলুর চরিত্রটিকে কমিউনিস্ট বলে স্বীকার করেন নি। (পৃ. ড-ত দ্র.) তবু পার্টির ভেতরে সমালোচনার হাত থেকে তিনি রেহাই পান নি। যাঁরা গোপাল হালদারের লেখাটির সমালোচনা করেছিলেন তাঁরা সকলে 'জাগরী'-ও পড়েন নি, সমালোচনাটিও পড়েন নি। স্রেফ শোনা কথার ভিত্তিতে 'কাগে নিয়ে গেল কান' বলে হৈহৈ করেছিলেন। এক প্রত্যক্ষদর্শী জানিয়েছেনঃ ঐ আপত্তিকারকদের অন্যতম ছিলেন কালনার পার্টি নেতা, হরেকৃষ্ণ কোঙার।

১০. 'গণশক্তি' (৩.৩.২০০২, রবিবারের পাতা, পৃ. দশ)। পরে 'দি এশিয়াটিক সোসাইটি' প্রকাশিত - গোপাল হালদার স্মারকগ্রন্থে এটি পুনর্মুদ্রিত হয়েছে (পৃ. ১০-১৭)। কুদ্দুস জানিয়েছেন, রাজ্য কমিটিতে এই প্রস্তাব রেখেছিলেন পুনর্নির্বাচিত রাজ্য সম্পাদক, জ্যোতি বসু। (ব্যক্তিগত চিঠি, ২২.১১.২০০৪)

১১. বিশেষ করে 'গণনাট্য সঙ্ঘ'-এ অভিনয়ের জন্যে নতুন নাটক বাছাই-এর সময়ে নানা অবোধ মন্তব্য শোনা যেত। ১৯৫০-এর দশকে ভানু চট্টোপাধ্যায়ের 'আজকাল' নাটকটি নিয়ে এমন কাণ্ড হয়েছিল। পরেশ ধর সে-কথা বহুদিন আগে আমায় বলেছিলেন; কোথাও একটা লিখেওছিলেন বলে মনে হচ্ছে।

১২. অনিল বিশ্বাস সম্পাদিত, বাঙলার কমিউনিস্ট আন্দোলন, খণ্ড ৩, পৃ. ৩০৮।

সংযোজন ।। এক

সুভাষ মুখোপাধ্যায়কে লেখা জ্যোতি বসুর একটি চিঠি (? অগস্ট, ১৯৫৪) থেকে মনে হয়ঃ 'স্বাধীনতা'-য় বিতর্ক শুরু হওয়ার আগেই পার্টির রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর কাছে 'ভূতের বেগার' নিয়ে নালিশ জমা পড়েছিল। সে-ব্যাপারে পার্টির সিদ্ধান্ত জানার জন্যে সুভাষ নিজেই ৩১.৭.৫৪-য় একটি চিঠি দেন। পার্টির সাংস্কৃতিক উপসমিতি তুলে দেওয়া হয়েছে কিনা এমন একটা তির্যক প্রশ্নও তাতে ছিল। জ্যোতি বসুর উত্তরটি সুভাষের তর্জমাতেই নিচে দেওয়া হলোঃ

প্রিয় কমরেড সুভাষ,

আজ তোমার ৩১/৭/৫৪ তারিখের চিঠি পেলাম। (১) টাইপ করা দলিল আর তোমার চিঠি পড়লাম। (২) সাংস্কৃতিক সাব-কমিটি 'লিকুইডেট' করা হয়নি। কমরেড নিরঞ্জন সেন ফিরে এলেই সভা ডাকব। আমরাও অন্যান্য কাজে ব্যস্ত ছিলাম। অগস্টের কোনো সময়ে সভা ডাকা হবে। (৩) 'ভূতের বেগার'-এর ব্যাপারে, দুঃখের বিষয়, এখনও কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছনো যায়নি। তবে এ-মাসের শেষাশেষি সেক্রেটারিয়েটের মতামত বোধহয় ধার্য করা যাবে।

(চিঠির দর্পণে, পৃ. ২৬৮)

সংযোজন ।। দুই

গোলাম কুদ্দুস বলেছেন, "কখনো পশ্চিমবঙ্গে কমিউনিস্ট পার্টি 'স্বাধীনভাবে মতামত প্রকাশের জন্য সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে কোনো কমরেডকে বহিষ্কার করেছে পার্টি থেকে' - এমন কোনো নজির নেই। না, তা হয়তো নেই। কিন্তু পার্টি-সদস্য শান্তিময় রায়ের স্ত্রী, সাবিত্রী রায়ের 'স্বরলিপি' উপন্যাসটি বেরনোর (১৯৫২) পর পার্টি যা করেছিল তাকেও খুব ভালো কাজ বলা যায় না। এ বিষয়ে পার্টির খোদ কেন্দ্রীয় কমিটির প্রস্তাবটি (২৬.১২.১৯৫২) হুবহু তুলে দিচ্ছিঃ

The Central Committee of the Communist Party of India directs that no 'book' written by the author of Swaralipi should be advertised by our Party journals until she unconditionally expresses regret for writing the books.

সাবিত্রী রায় পার্টি সদস্য ছিলেন না, তবু 'Copy to Com. Sabitri Roy for Information' লিখে, West Bengal Committee, Communist Party of India, 64/A, Lower Circular Road, Calcutta-16 রবার স্ট্যাম্প মেরে, কেন্দ্রীয় কমিটির প্রস্তাবের প্রতিলিপি ২৯.১২.১৯৫২-য় সাবিত্রী রায়কে পাঠানো হয়। 'স্বরলিপি'কে পার্টিবিরোধী বা কুৎসামূলক বই মনে করলে নিশ্চয়ই পার্টি তার কোনো পত্রপত্রিকায় সে-উপন্যাসের, বা সাবিত্রী রায়ের কোনো বই-এর বিজ্ঞাপনই না ছাপতে পারে। কিন্তু লেখিকার কাছে 'নিঃশর্ত ক্ষমাপ্রার্থনা' দাবি করার অধিকার পার্টি পেল কোত্থেকে? এর সঙ্গে ক্যাথলিক চার্চ-এর নিষিদ্ধ পুস্তকের তালিকা প্রকাশের (১৫৫৯) তফাত কোথায়?

১৯৬৬-র পর ভাটিকান কর্তৃপক্ষ ঐ তালিকা আর বার করেন নি। ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির নেতৃত্ব কোনোদিনই আলাদা করে অমন লিখিত তালিকা বার করতেন না, ঠিকই। কিন্তু একটি অঘোষিত তালিকা পার্টি-মহলে চালু থাকত। 'ভূতের বেগার'-এর ঘটনাই তার একমাত্র নজির নয়।

এই মনোভাবকে এককথায় 'স্তালিনবাদী' বলে মার্কা মারার প্রবণতা কিছু দক্ষিণপন্থী নয় বাম মহলে দেখা যায়। কিন্তু ব্যাপারটা অত সোজা নয়। স্তালিন আমলে সোভিয়েত যুক্তরাষ্ট্র-এ বই নিষিদ্ধ করার ভার ছিল লেনিন-এর স্ত্রী, নাদেজদা ক্রুপস্কায়া- র ওপর। অন্যদিকে 'প্রাভদা'-য় ভাষাতত্ত্ব নিয়ে বিতর্কে (১৯৫০) যোগ দিয়েছিলেন খোদ স্তালিন; তার আগে আকাদেমিশিআন মার-কে মতপ্রকাশে কোনো বাধা দেওয়া হয়নি।

লুকাচ-এর কথা থেকে জানা যায়ঃ দর্শনের ক্ষেত্রে একই ব্যাপার ঘটেছিল। সে-বিতর্কে মার্কসীয় দর্শনের সঠিক ব্যাখ্যা হাজির করেন স্তালিন। লুকাচ তাঁর শেষ বয়সেও সমর্থন করেছিলেন স্তালিনকে। যে হাঙ্গেরিয় বুদ্ধিজীবীরা লুকাচ-এর সাক্ষাৎকার নিয়েছিলেন তাঁরা চেষ্টা করেও লুকাচ-কে দিয়ে এ বাবদে স্তালিন-বিরোধী মন্তব্য করতে পারেন নি।

সুতরাং 'স্তালিনবাদী' মার্কা মেরে অত অনায়াসে বিবেকশুদ্ধি করা যায় না। পার্টির মধ্যে মাঝে মাঝে কেন এমন কালোপাহাড়ি ঝোঁক আসে - তার কারণ আরও খতিয়ে দেখা দরকার। বা, আরও ছড়িয়ে ভাবলে, কোনো প্রতিষ্ঠান কেন তার বিরোধী মত সম্পর্কে অসহিষ্ণু হয়ে ওঠে ও গাজোয়ারি দেখায় - এই প্রশ্নেরও মোকাবেলা করতে হবে। সেন্সর প্রথা কি সব অবস্থাতেই অচল, না কি কোনো কোনো বিশেষ পরিস্থিতিতে তারও দরকার পড়ে? প্রকাশ-এর পরে সেন্সর কি প্রকাশ-এর আগের সেন্সর ব্যবস্থার চেয়ে ভালো? (কোলোকোভস্কি নামে একদা-মার্কসবাদী - পরে কমিউনিস্ট-বিরোধী এক পোলিশ দার্শনিক যেন সেরকম আভাসই দিয়েছেন।) নাকি কোনো অবস্থাতেই কোনো ব্যাপারেই পার্টি বা রাষ্ট্রের তরফে সেন্সর থাকা উচিত নয়? সাম্প্রদায়িকতা, জাতিবিদ্বেষ ইত্যাদির সপক্ষে প্রচারও কি অবাধে চলতে দেওয়া যায়? এইসব বিষয়ে আরও খোলাখুলি আলোচনা হওয়া দরকার।

পরিশিষ্টঃ

হুগলী জেলা-সম্পাদকের পদ ছেড়ে কলকাতার রাজ্য পার্টি-কেন্দ্রে সুশীতল রায়চৌধুরী কবে এলেন? এ বিষয়ে 'এবং জলার্ক' পত্রিকায় বিভিন্নজনে যা লিখেছেন তার সবই ভুল। সকলেরই মতে, ১৯৫০-এর দশকের মাঝামাঝি সময়ে তিনি 'স্বাধীনতা'-র সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য মনোনীত হন। কেউ কেউ তো একেবারে নির্দিষ্ট সাল দিয়েছেনঃ ১৯৫৬। [এবং জলার্ক, ১:৪, এপ্রিল-জুন ১৯৯৮, পৃ. ২০০, ঐ, ২:৪, এপ্রিল-জুন ১৯৯৯, পৃ. ১৭১] মুজফ্ফর আহমদ-এর একটি চিঠি থেকে জানা যায়ঃ "পার্টির প্রদেশিক কমিটির কাজে তাঁকে আনা হয়েছিল উনিশশো পঞ্চাশের দশকের প্রায় মাঝামাঝিতে"। [ঐ, ১:৪, পৃ. ২১১] গোপাল মুখোপাধ্যায় জানিয়েছেন, হুগলি জেলায় পার্টির বেশিরভাগই ছিলেন বিজয় মোদকের পক্ষে। সুশীতলবাবু তাই 'স্বাধীনতা'-য় যাওয়ার সিদ্ধান্ত করেন। [ঐ, ২:৪, পৃ. ১৯৫]

আর একটু খোঁজখবর করলেই 'এবং জলার্ক' জানতে পারতেনঃ ১৯৫৩-য় পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য পার্টির ষষ্ঠ সম্মেলন (কলকাতা, ১৭-২১ ডিসেম্বর, ১৯৫৩) থেকেই সুশীতল রায়চৌধুরী পার্টির প্রাদেশিক কমিটিতে নির্বাচিত হন। [অনিল বিশ্বাস, সম্পা, খণ্ড ২, পৃ. ৫০৯] তার পরের তিনটি রাজ্য সম্মেলন থেকেও তিনি রাজ্য কার্যনির্বাহক কমিটির সদস্য নির্বাচিত হন। এই সমস্ত পর্ব জুড়েই তিনি 'স্বাধীনতা'-র সঙ্গে যুক্ত। [ঐ, খণ্ড ৩, পৃ. ২৯৫, ৫৮২, ৭২৬]

'এবং জলার্ক'-এর কর্মীরা যদি অবিভক্ত পার্টির পুরোনো, নেতৃস্থানীয় সদস্যদের কাছে যেতেন, তাহলেই সব কথা জানতে পারতেন, পাঠকদের ভুল খবর দিতেন না। তার ওপর 'এবং জলার্ক'-এর লেখকরা বোধহয় কোনোদিন কমিউনিস্ট পার্টির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না - না ভাঙার আগে, না পরে। থাকলে, এমন উদ্ভট কথা লেখা যেত না যে, "মাদুরাইতে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির তৃতীয় পার্টি কংগ্রেসের অনুষ্ঠানে হুগলী জেলা পার্টি সম্মেলনের রিপোর্ট দেন সুশীতল রায়চৌধুরী'। [ঐ, ১:৪, পৃ. ২০০] পার্টির সর্বভারতীয় সম্মেলনে কখনও কোনো জেলা সম্মেলনের রিপোর্ট পেশ করা হয় না, করা হয় রাজ্য সম্মেলনে। ঐ পত্রিকায় রিপোর্টটি ছাপার সময়ে যে শিরোনামটি দেওয়া হয়েছে সেটি বরং সত্যর কাছাকাছি আসে [১৯৫৩ ডিসেম্বর-জানুয়ারি '৫৪ (মাদুরাই) ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি তৃতীয় পার্টি কংগ্রেসের (তথৈব) প্রাক্কালে হুগলী জেলা পার্টি সম্মেলনের রিপোর্ট,' পৃ. ১১৯]। আসলে রিপোর্টটি জেলা সম্মেলনে সম্পাদকের রিপোর্ট।

সুশীতলবাবু ঠিক কবে থেকে 'স্বাধীনতা'-র সম্পাদকমণ্ডলীতে এলেন তা নিশ্চিত বলা যাচ্ছে না। তবে ১৯৫৩-র রাজ্য সম্মেলনের আগে নয়। প্রাদেশিক সার্কুলার নং ৮/৫২ (১৩ মে, ১৯৫২) থেকে জানা যায়ঃ জ্যোতি দাশগুপ্ত তখন 'স্বাধীনতা'-র কার্যকারী সম্পাদক, আর 'সম্পাদকীয় বোর্ড'-এ আছেন আরও এগারোজন সদস্য। সেখানে সুশীতলবাবুর নাম নেই। [অনিল বিশ্বাস, সম্পা, খণ্ড ২, পৃ. ৪৩২]

কৃতজ্ঞতা স্বীকারঃ অমিতাভ ভট্টাচার্য, অস্মিতা চৌধুরী, প্রণব বিশ্বাস, প্রদ্যুৎ দত্ত


রচনাপঞ্জিঃ

• অনিল বিশ্বাস (সম্পা.)। বাংলার কমিউনিস্ট আন্দোলনঃ দলিল ও প্রাসঙ্গিক তথ্য। খণ্ড ২ ও ৩। কলকাতাঃ ন্যাশনাল বুক এজেন্সি, ২০০৩।
• কার্ল মার্কস ও ফ্রেডারিক এঙ্গেলস। কমিউনিস্ট পার্টির ইশতেহার (১৮৪৮)। মস্কোঃ প্রগতি প্রকাশন, তারিখ নেই।
• গোপাল হালদার। ['জাগরী'-র সমালোচনা]। সতীনাথ গ্রন্থাবলী, খণ্ড ১, শঙ্খ ঘোষ ও নির্মাল্য আচার্য (সম্পা.)। কলকাতাঃ অরুণা প্রকাশনী, ১৯৭৩, পৃ। চ-ত-এ পুনর্মুদ্রিত।
• গোলাম কুদ্দুস। 'আমার গোপালদা'। গোপাল হালদার - সংস্কৃতির রসরূপদ্রষ্টা। সুনীলবিহারী সেনশর্মা, করুণাসিন্ধু দাস, পল্লব সেনগুপ্ত (সম্পা.)। কলকাতাঃ দি এশিয়াটিক সোসাইটি, ২০০৩।
• সতীন্দ্রনাথ চক্রবর্তী। 'সুভাষ মুখোপাধ্যায় ও ভূতের বেগার'। সুভাষ মুখোপাধ্যায়। কথা ও কবিতা। শঙ্খ ঘোষ, সৌরীন ভট্টাচার্য, অমিয় দেব, মানবেন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়, প্রণব বিশ্বাস (সম্পা.)। কলকাতাঃ দে'জ পাবলিশিং, ১৯৯৮, পৃ. ২৭৪-৯৩।
• সুভাষ মুখোপাধ্যায়। গল্পসংগ্রহ, খণ্ড ১। দে'জ পাবলিশিং, ১৯৯৪।
• সুভাষ মুখোপাধ্যায়। চিঠির দর্পণে। কলকাতাঃ আনন্দ পাবলিশার্স, ১৯৯৬।
• সুভাষ মুখোপাধ্যায়। ভূতের বেগার। কলকাতাঃ সাহিত্য জগৎ, ১৯৫৪।
• সুভাষ মুখোপাধ্যায়। ভূতের বেগার। কলকাতাঃ নবপত্র প্রকাশন, ১৯৭৩।
• সুভাষ মুখোপাধ্যায়। ভূতের বেগার। কলকাতাঃ প্যাপিরাস, ২০০০।
• Kaul, Jolly Mohan. 'Subhas Mukherjee - The Rebel Poet', in সুভাষ মুখোপাধ্যায় কথা ও কবিতা (সতীন্দ্রনাথ চক্রবর্তী দ্র.)।
• Lenin, V. I. Lenin on Language. Moscow: Raduga Pubshilers, 1983.
• Marx, Karl and Fredrich Engels. Manifesto of the Communist Party (1848). Bombay: People's Publishing House, 1946 (trans. Samuel Moore).
• Marx, Karl and Fredrich Engels. The Communist Manifesto of Karl Marx and Fredrich Engels (1848). Ed. D. Ryasanoff. Calcutta: Radical Book Club, 1972 (trans. Eden and Cedar Paul).
• Sen, Mohit. A Traveller and The Road. The Journey of an Indian Communist. New Delhi: Rupa, 2003.


[প্রবন্ধটি 'সাংস্কৃতিক সমসময়'-এ প্রকাশিত হয়েছিল। লেখাটি পুনঃপ্রকাশ করার জন্য আমরা তাদের প্রতি সৌজন্য জ্ঞাপন করছি।]