আমার একটা কবি আছে। সেই কবিটা আস্ত একটা মস্ত পাগল।
ইদানিং মাথার ব্যামোটাও একটু বেড়েছে। মানুষ খোঁজার বাই
উঠেছে। দিন নেই, রাত নেই - রাস্তাঘাটে, নিরালায়-লোকালয়ে,
বনে-প্রান্তরে, পাহাড়ে-পর্বতে ইত্যাদি সবখানেই কবি
মানুষ খুঁজে বেড়াচ্ছে। ভোরবেলা ঘর থেকে বেড়িয়ে গলির মুখে
আসতেই দাঁড়িয়ে থাকা ল্যাম্পপোস্টটা বলে উঠলো - “কবি, মানুষ
কি একটাও খুঁজে পেলে? জানি পাবে না। চারদিকে অমানুষেরা
গিজগিজ করছে, ইদানিং ওদের অসভ্যতাও কিঞ্চিত বেড়েছে।
একটু গভীর রাত হলেই কয়েকজনকে দেখি মত্ত মাতাল হয়ে -
একদিন তো এক নাবালিকাকে ধরে...। যাকগে, ওদের কথা
যত কম বলা যায় ততই ভাল। অমানুষ দেখে দেখে আমার
ভীষণ বিতৃষ্ণা ধরে গেল। দেখ - মানুষ খুঁজে পাও কি না।
পেলে আমাকে একটু খবর দিও“। কবি দিকভ্রান্তের মতো খুঁজে
চলেছে - কোথায় মানুষ! কোথায় মানুষ! চারদিকে গিজগিজ করছে
শুধু মানুষ আর মানুষ। কিন্তু মানুষ খুঁজে পাচ্ছে না কোথাও!
লোভী মানুষ, রক্তপিশাচ মানুষ, শিরদাঁড়া বাঁকা মানুষ, পশু চর্মাবৃত
মানুষ, হেঃ হেঃ করা মানুষ, মুখোশ মানুষে গিজগিজ করছে চারিদিক।
অথচ কবি মানুষ খুঁজে পাচ্ছে না। জানি, ওরা এখানে ওখানে, আশেপাশে
সবখানেই আছে। কিন্তু, অভিমানী মানুষগুলো কেন
যে মুখ লুকালো আর কোথায় যে আত্ম-গোপন করল কে জানে!
কবির মাথার ব্যামোটা বেশ ভালোই বেড়েছে মনে হচ্ছে।
হঠাৎ অন্ধকারের মধ্যে কবি দেখতে পেলো এক ঝলক বিদ্যুতের লেলিহান শিখা।
কে ও কে ও? কবি অবাক বিস্ময়ে দেখতে পেল ওর হারিয়ে যাওয়া তিলোত্তমাকে।
তিলোত্তমা যেন বলে উঠল - "আমি আছি তো, তোমাদের মধ্যেই আমি জেগে আছি।
দেখো তো, তোমাদের শিরদাঁড়া কেমন টানটান সোজা হয়ে উঠছে।
হ্যাঁ, আমি তোমাদের মধ্যেই জেগে আছি তো।
তোমরা আর ঘুমিয়ে পোড়ো না, শিরদাঁড়া সোজা করে আমার থেকে এক টুকরো আগুন নিয়ে
দাবানলের মতো ছড়িয়ে দাও গ্রামে-গঞ্জে, নগরে-শহরে, পথে-প্রান্তরে।
অন্ধকার দূর করে আলোয় আলোময় করে তোলো তোমাদের হৃদয়,
বিশুদ্ধ করে তোলো তোমাদের মন, অত্যাচারীর খড়গ কৃপাণ ভেঙে টুকরো টুকরো করে দাও,
যেন আর কোনো মেয়ের প্রকৃত নাম হারিয়ে গিয়ে অভয়া বা নির্ভয়া বা তিলোত্তমা না হয়!