"অ্যাই বিড়ি! দাঁড়া!"
শিয়ালদা স্টেশনে ঢোকবার মুখে হাজারো মানুষের হৈ হট্টগোল ভেদ করে এমন সুমধুর সম্ভাষণটা কানে ঠিক পৌঁছে গেল আমার। হয়তো আসল নামে ডাকলে শুনতে পেতাম না, কিন্তু এমন নামে ডেকেছে, কানে না ঢুকে উপায় আছে! আমি হাঁটা থামিয়ে পেছনে তাকালাম। এ নামে শুধু একজনের পক্ষেই ডাকা সম্ভব, অগুনতি মানুষের ভীড়ে সেই একজনকে খুঁজতে থাকল আমার আগ্রহী চোখদুটো।
'বিড়ি' কোনোভাবেই আমার নাম নয়। হওয়া সম্ভবও নয়। মা-বাবা আদর করে যত অদ্ভুত নামেই ডাকুক না কেন, এমন একটা নেশার গন্ধওয়ালা নাম কিছুতেই রাখতে পারেন না। এরকম বিদঘুটে নাম একমাত্র যার পক্ষে দেওয়া সম্ভব তার সঙ্গে দীর্ঘদিন যোগাযোগ না থাকায় ভুলেই গেছিলাম নামটা, যেটা পুরো কলেজ-ইউনিভার্সিটি জীবনে আমার গলায় আইডেনটিটি কার্ডের মতো ঝুলেছে।
লম্বা লম্বা ঠ্যাঙে ভীড় ঠেলে এগিয়ে এল বাদলদা, অনেকগুলো বছর পরে আমাদের সকলের প্রিয় মানুষটার দেখা পেয়ে খুবই খুশি হলাম আমি।
"আরে বাদলদা! কোথায় ডুব দিয়েছিলে অ্যাদ্দিন?"
"সে অনেক গল্প, আস্তে ধীরে হবে'খন। আগে বিড়ি খাওয়া দেখি! তোর সেই স্পেশাল বিড়ি, কার দোকান থেকে যেন আনতিস?"
"নাড়ুর দোকান। সে তো মান্ধাতার ঠাকুর্দার আমলের কথা। এখন সেই নাড়ুও নেই, সেই বিড়িও নেই। সিগারেট আছে, চলবে?"
"বিড়িকে ত্যাগ দিলি? নিজের পরিচয় বদলে ফেলতে তোর বুকে এতটুকু বিঁধল না?"
বাদলদা হাসল। আগের মতোই গলা ছেড়ে, প্রাণ খুলে। আমিও হেসে ফেললাম, মনটা ভীষণ ভালো হয়ে গেল।
বাদলদার সঙ্গে আমার পরিচয় কলেজজীবনের শুরুতেই। অঙ্কে অনার্স নিয়ে আমি যেখানে ভর্তি হয়েছিলাম সেটা ছিল হোম ইউনিভার্সিটি, ডিগ্রি কোর্সে পড়ার সুযোগও ছিল সেখানে। বাড়ি থেকে পঞ্চাশ কিলোমিটার দূরে ইউনিভার্সিটি, ট্রেনে যাতায়াত করতে হয়। প্রথমদিন বাড়ি ফেরার সময় স্টেশনে পরিচয় বাদলদার সঙ্গে, সে তখন এম.এসসি. ফার্স্ট ইয়ারে পড়ে, আমার শহরেই থাকে। দু'চার দিন যেতে বুঝলাম, ওই লাইনের ট্রেনে যারা রোজ যাতায়াত করে ইউনিভার্সিটিতে আসে, তাদের সবার গুরু হল বাদলদা। সকলেই ভালোবাসে ওকে, ট্রেনের অন্য নিত্যযাত্রীদের মধ্যেও বাদলদা জনপ্রিয়।
প্রথমদিন প্ল্যাটফর্মে পরিচয় হওয়ার পর বাদলদা আমাকে জিজ্ঞাসা করেছিল, "ভর্তি তো হয়েছিস এতদূরে। তা হোস্টেলে থাকবি, নাকি আমাদের সঙ্গে ডেলি পাষণ্ডগিরি করবি?"
কথার মানেটা আমি ঠিক ধরতে পারিনি। আমার ভেবলে যাওয়া মুখ দেখে বাদলদা আর একটা ছেলেকে বলল, "জঙ্গল! ওকে বুঝিয়ে দে!"
"আপ ট্রেনটা ঢুকতে দে! ট্রেন এলে নিজেই বুঝতে পারবি ডেলি পাষণ্ডগিরি কাকে বলে!"
হাসতে হাসতে বলেছিল আমার চাইতে এক ক্লাস উঁচুতে পড়া বাদলদার সেই 'জঙ্গল'। অবশ্য পরে জেনেছিলাম, ওর নাম সুমন। ওদের বাড়ির চারপাশ গাছগাছালিতে ঘেরা, তাই বাদলদার ওই নামকরণ।
পাঁচটা বছর ওই লাইনের মারাত্মক ভীড় ট্রেনে ডেলি প্যাসেঞ্জারি করে আমি হাড়ে হাড়ে বুঝেছিলাম, বাদলদার ওই 'ডেলি পাষণ্ডগিরি' নাম দেওয়াটা কতটা সার্থক।
ডেলি পাষণ্ডগিরিতে অবশ্য দারুণ মজাও ছিল, আর সেগুলো সবই ছিল বাদলদার উর্বর মস্তিষ্কপ্রসূত।
কথা বলতে বলতে আমরা প্ল্যাটফর্মে ঢুকে পড়েছিলাম। আমি তখনও জানিনা বাদলদার গন্তব্য, কোন ট্রেন ধরবে। তাই জিজ্ঞেস করলাম, "তুমি কি কৃষ্ণনগরে যাচ্ছ?"
"যাচ্ছিলাম তো অন্য জায়গায়। কিন্তু এখন তোকে দেখে মনটা কৃষ্ণনগরের জন্য কেমন আনচান করে উঠল, ভাবছি চলেই যাই। রাত্তিরটা আমাকে তোর বাড়িতে থাকতে দিতে হবে কিন্তু, আমাদের ওখানকার পাট চুকে গেছে অনেকদিন, জানিস তো?"
দীর্ঘদিন আমিও বাড়ির বাইরে, তাই খবরটা জানতাম না। বাদলদার থাকার প্রস্তাবে আনন্দে ডগমগ হয়ে বললাম, "আলবাৎ থাকবে! তোমাকে দেখে মা ভীষণ আনন্দ পাবে। সন্ধ্যের পর কলেজের মাঠে আমাদের পুরোনো ছেলেপেলেরা অনেকে আসে, তোমাকে এতদিন পরে দেখলে সবাই খুব খুশি হবে।"
"বলছিস? তাহলে তো যেতেই হয়। আগে চল বাইরে গিয়ে ভাঁড়ের চা খাই। চায়ের সঙ্গে ফুঁকতেও হবে, স্টেশনের ভেতরে তো আবার সেটা হবে না।"
চা খেতে খেতে শুনলাম, বাদলদা পোস্ট ডক্টরেট করতে জাপানে গেছিল, বছর পাঁচেক সেখানে ছিল। এখন গৌহাটিতে থাকে, ইউনিভার্সিটিতে পড়ায়। বিয়ে-টিয়ে করে গৌহাটিতেই থিতু হয়েছে। সেই মুহূর্তে আমার একটা কথা মাথায় এসে যাওয়ায় প্রচন্ড হাসি পাচ্ছিল। কোনোরকমে হাসিটা চেপে, মুখে নিরীহ গোবেচারা ভাব ফুটিয়ে বললাম, "গৌহাটিতে তো প্রচুর বাঙালি। তাদের মুখ দিয়ে নিশ্চয়ই কখনো সখনো ওই নামটা বেরিয়ে যায়, যেটা আমি দিয়েছিলাম?"
বাদলদার বুদ্ধিদীপ্ত চোখদুটো কৌতুকের রঙ লেগে চকচকে হয়ে উঠল। আমার মুখের ওপর একটা ধোঁয়ার রিং ছেড়ে ও বলল, "যেদিন তুই ওইভাবে আমাকে ডাকলি, সেদিন ফেরার পথে ট্রেনে তোকে কি করা হয়েছিল মনে আছে?"
"মনে আবার থাকবে না? তবে আমাকে যা-ই করো না কেন, তোমার নামটা কিন্তু জব্বর হয়েছিল, এটা তো মানবে?"
"তুই তো গুণী ছেলে! আর সবসময় আমি গুণের কদর দিই।"
কেসটা হয়েছিল কি, আমাকে 'বিড়ি' নাম দেওয়াতে মনে মনে বেশ চটেছিলাম আমি। বিড়ি কে না ফোঁকে? আমি হয়তো ওদের চাইতে একটু বেশিই ফুঁকতাম, কিন্তু তাই বলে এমন একটা নাম দেবে আর সেই নাম ধরে সবার মধ্যে ডাকবে? বাদলদার মুখ থেকে নামটা আমার ক্লাসেও ছড়িয়ে গেছিল, আমার ধারণা, এই নামের জন্যই আমি একটাও মেয়ে পটাতে পারিনি। তাই আমি প্রতিশোধ নিতে একদিন প্ল্যাটফর্ম ভর্তি লোকের মধ্যে 'বাদল' নামটার প্রথম অক্ষরটাতে বেশ জোর দিয়ে মাঝের অক্ষরটা হালকা করে খেলিয়ে শেষ অক্ষরটাতে ল্যান্ড করেছিলাম, অবশ্য শেষে 'দা' জুড়ে প্রাপ্য সম্মানটা দিতে ভুলিনি। ফলে যা হবার হয়েছিল, শব্দটা কানে যেতে ভুরু কুঁচকে উঠেছিল বাদলদার।
"এই যে এক ইঞ্চি সাইজের বিড়ি, তুই আমাকে কি বলে ডাকলি?"
চারপাশে সবাই তখন হাসছে। আমিও হাসি চেপে মুখটা কাঁচুমাচু করে বলেছিলাম, "আমার অত সাহস আছে? তুমি একবার চেপে ধরলে সব ধোঁয়া বেরিয়ে যাবে না আমার? আসলে জিভটা একটু জড়িয়ে গেছিল, তাই অন্য রকম শোনালো।"
বাদলদা আর কথা বাড়ায় নি। সেদিন ফেরার পথে ট্রেনে ও প্রতিশোধ নিয়েছিল। আমাদের ট্রেন লাইনে একটা জায়গায় কোনো কারণে মিনিটখানেকের জন্য ওভারহেড লাইনে পাওয়ার থাকত না। ট্রেন চলত বটে, তবে ওই সময়টুকু ভেতরটা অন্ধকার হয়ে যেত। তখন শীতকাল, আমাদের ওদিকে দারুণ ঠান্ডা পড়ত বলে ঠান্ডা থেকে বাঁচতে আমরা অল্পবয়সীরাও অনেকেই চাদর জড়াতাম। সেদিন অন্ধকার হতেই কে যেন একটা গায়ের চাদর দিয়ে আমার মাথাটা মুড়ে ফেলল, তারপর দুমাদ্দুম কিল ঘুষি বর্ষণ হতে লাগল আমার ওপর। আমার তো হাত-টাতও চাদরে মোড়ানো, ফলে নিজেকে ছাড়াতেও পারছি না। কিছুক্ষণ কিলিয়ে হাতের সুখ করে তারপর আবার চাদর খুলে নিল। আলো জ্বলল যখন, তখন ট্রেনের ভেতর সব স্বাভাবিক। আমি ছাড়া বাকি সবার মুখে অস্বাভাবিক নির্লিপ্তি, কোথাও একটু মিচকে হাসিও লটকে নেই। বাদলদার নির্দেশেই যে কাজটা হয়েছিল সে আমি জানতাম, তবে অতগুলো হাত তো বাদলদার একার হতে পারে না, আর কার কার হাত ছিল সেখানে, সেটা আমি আর বার করতে পারিনি। তারপর থেকে মাঝেমধ্যেই ট্রেনে এই খেলাটা চলত, প্রতিবার আলাদা আলাদা টার্গেট। একদিন অন্ধকারে ভুল করে অচেনা একজন যাত্রীকে বেঁধে ধরে পেটানোর পরে অবশ্য খেলাটা বন্ধ হয়ে গেছিল। তবে আমার দেওয়া দু'অক্ষরের নামটা কিন্তু মাঝেমাঝেই শোনা যেত।
চায়ের চক্করে লোকাল ট্রেন ফস্কে আমরা উঠলাম এক্সপ্রেস ট্রেনে। ট্রেন চলছিল, আর আমাদের গল্পও অতীত আর বর্তমানে দৌড়ে বেড়াচ্ছিল। আশেপাশে কোনোদিকে মন ছিল না আমার। কথায় কথায় ঘন্টা দেড়েক পেরিয়ে গেছে, হঠাৎ দেখলাম বাদলদা একটু উশখুশ করছে, বার বার চোরা চাহনিতে দূরে দরজার দিকে তাকাচ্ছে। আমার একটু অস্বস্তি হতে লাগল। ট্রেনে কি এমন কেউ উঠেছে যার কাছ থেকে ও নিজেকে লুকোতে চাইছে? কে জানে, হয়তো কোনো প্রাক্তন প্রেমিকাকে দেখেছে! আমার একটাও না জুটলে কি হয়, ইউনিভার্সিটিতে প্রায় সব ডিপার্টমেন্টেই বাদলদার একটা-দুটো করে আধা-প্রেমিকা ছিল। ওর দৃষ্টি অনুসরণ করে কয়েকবার দূরে দৃষ্টিপাত করেও আমি তেমন কাউকে দেখতে পেলাম না।
কিছুক্ষণ বাদে বাদলদার উশখুশানিটা আরও বাড়ল। এবার আমি দেখলাম, একজন টিকিট চেকার উঠেছেন ট্রেনে, আর তিনি আমাদের দিকেই এগিয়ে আসছেন। বাদলদা কি তাহলে এজন্যই এমন করছে!
ছাত্রজীবনে টিকিট কাটত না বাদলদা, আর আমাদেরও কাটতে দিত না। দুই স্টেশনের চেকাররা সকলেই চিনতেন ছাত্রছাত্রীদের দলটাকে, তাঁরাও টিকিট চেয়ে নিজেদের বিড়ম্বনা বাড়াতেন না। কিন্তু তাই বলে এখন? অধ্যাপক হয়ে যাবার পরেও বাদলদা পুরোনো স্বভাব ধরে রেখেছে? বাদলদাকে চেকারের হাতে হেনস্থা হতে হবে ভেবে আমার বেশ লজ্জা লাগছিল।
আমি ওকে জিজ্ঞাসা করতে গেলাম, "তুমি কি টিকিট কাটতে ভুলে গেছ?"
তার আগেই দেখি, আমার পাশ থেকে উঠে লম্বা লম্বা পা ফেলে বাদলদা টয়লেটের দিকে যাচ্ছে। আমার মনে আর বিন্দুমাত্র সন্দেহ ছিল না যে ও টিকিট কাটে নি, হয়তো আমার সঙ্গে দেখা হয়ে যাওয়াতে ভুলে গেছে। কিন্তু তাতে অত ভয়ের কি আছে? ফাইন দিয়ে দিলেই তো মিটে যায়!
ততক্ষণে চেকার ভদ্রলোক আমার টিকিট দেখে মোক্ষম প্রশ্নটি করে ফেলেছেন, "আপনার সঙ্গে যিনি আছেন, তাঁর টিকিট?"
"আমি বলতে পারব না। আমার সঙ্গে তাঁর ট্রেনেই দেখা।"
চেকার আমাকে ছেড়ে অন্যদের টিকিট দেখতে থাকলেন। মাঝেমাঝে টয়লেটের দিকে তাকাতে লাগলেন শিকারীর দৃষ্টিতে। এদিকে দশ মিনিট পেরিয়ে গেল, বাদলদা আর বেরোয় না। চেকার ভদ্রলোক আর না পেরে টয়লেটের সামনে গিয়ে দাঁড়ালেন, যাতে পাখি বেরোলেই খপ করে ধরতে পারেন। উৎকন্ঠায় আমারও অবস্থা খারাপ, কিন্তু বাদলদা কিছুতেই বেরোয় না।
চেকার ভদ্রলোকের সম্ভবত পরের স্টেশনে নামবার কথা, তাই তিনি এবার দরজায় ধাক্কাধাক্কি শুরু করলেন। ইতিমধ্যে নাটক দেখতে অনেক যাত্রী টয়লেটের দরজার সামনে চলে গেছে, বাকিরা সিট ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়েছে। আর আমি কেবল অস্বস্তিতে, লজ্জায় নিজের সিটে মাথা নিচু করে বসে আছি।
পরের স্টেশনে ট্রেন দাঁড়ালো, বাদলদা তখনও বেরোয়নি, ফলে চেকারেরও নামা হলনা। তিনি তো রেগে লাল, কারণ এরপর ট্রেন দাঁড়াবে আধঘন্টা বাদে, চারটে স্টেশন পেরিয়ে, তখন নামতে হবে তাঁকে। একজন বিনা টিকিটের যাত্রীকে ধরতে গিয়ে এত ঝামেলায় তিনি সম্ভবত আগে কখনও পড়েননি।
ট্রেন স্টেশন ছেড়ে বেরিয়ে যাবার পরে বাদলদা হাসিমুখে বাথরুম ছেড়ে বেরোল। কিছুই যেন হয়নি এমন মুখ করে বলল, "এ কি! এতজন এখানে দাঁড়িয়ে কেন? অন্য টয়লেটগুলো নোংরা নাকি?"
"অনেক নাটক করেছেন! এবার চলুন।" চেকার মশাই রাগী গলায় বললেন।
"যাব তো। নিজের সিটে যাব, কিন্তু আপনারা পথটা না ছাড়লে যাব কি করে?"
"সিটে যাবেন না শ্রীঘরে, সেটা তো আমি বলব। আগে টিকিটটা দেখান।"
বাদলদা চেকারের দিকে তাকিয়ে ফ্যাক করে হেসে দিল। তারপর এ পকেট, ও পকেট হাতড়াতে লাগল। ওর কান্ড দেখে আমারই ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে যাচ্ছিল, চেকারমশাইয়ের অবস্থা যে আরও খারাপ সেটা অনুমান করতে পারছিলাম। কিন্তু সে নির্বিকার। পকেট হাতড়ে কিছু বেরোলো না দেখে চেকারের মুখে হাসি ফুটল।
"জানি তো নেই! পকেট ছিঁড়ে ফেললেও বেরোবে না। ফালতু সময় নষ্ট করছেন।"
মুখটাকে বেশ করুণ করে বাদলদা বলল, "একটু দাঁড়ান।"
পকেট থেকে এবার ও বার করল মানিব্যাগ, সেটা খুলে টিকিট বার করে চেকারের হাতে দিল। চেকার মশাই চমকে গেলেন, তিনি ভাবতেই পারেননি যে শেষপর্যন্ত টিকিট বার হবে। টিকিটটা ভালো করে মিলিয়ে দেখে বাদলদাকে বললেন, "তাহলে এরকম নাকানিচোবানি খাওয়ানোর অর্থ কি?"
"আমি আবার কি করলাম?"
"এই যে আমাকে দেখে ছুটে টয়লেটে ঢুকলেন, তারপর আধঘন্টা আর বেরোনোর নামই করলেন না?"
"দূর মশাই! আপনাকে দেখে কেন ঢুকব? পেটে হঠাৎ এমন মোচড় দিল, ছুটে না গিয়ে উপায় ছিল? তারপর যতবারই উঠে আসতে যাই, আবার মোচড় দেয়। আমাশা মশাই, বুঝলেন না?"
চেকারমশাই আমসি মুখ করে দরজার ধারে দাঁড়িয়ে রইলেন। বাদলদা মিটিমিটি হাসি মুখে ঝুলিয়ে এসে বসল আমার পাশে। ভুরু নাচিয়ে বলল, "কেমন দিলাম!"
এখন তো আমার বুঝতে বাকি নেই কেন বাদলদা বারবার চেকারমশাইয়ের দিকে তাকাচ্ছিল। ওভাবে ওঁর দৃষ্টি আকর্ষণ করে তারপর মোক্ষম চালটা চালল। আমি হাসতে হাসতে বললাম, "তুমি আর বদলালে না বাদলদা!"
ও বলল, "কি নাম দিয়েছিলি আমার? জানিস না, এরা সবসময় ওটাই থেকে যায়, কখনো বদলায় না।"