বিবিধ

আয়নার সংসার



অভিজিৎ রায়


কাউকে চেনা বা বোঝার চেয়ে নিজেকে চেনা বা বোঝা কঠিন। অথচ আমরা প্রত্যেকেই একা এক অদ্ভুত ভিড়ের মধ্যে আয়না কাঁধে করে ঘুরে বেড়াচ্ছি। লোকের সামনে গিয়ে সেই আয়না দাঁড় করিয়ে দিচ্ছি আর হাসছি। কবে সেই আয়নায় নিজের প্রতিবিম্ব শেষ দেখেছি তা মনে করতে পারি না ইদানিং। আমার এই অভব্য আচরণে কেউ একজন আয়নার মুখ আমার দিকে ঘুরিয়ে দিলে আমি প্রথমে বিস্মিত হই আর তারপরেই কান্নায় ভেঙে পড়ি। কিছুক্ষণ পর যখন স্বাভাবিক হই এবং আরেকবার আয়নার দিকে তাকাই তখন দেখি প্রতিবিম্ব একটা চেনা পুরোনো গান গাইছে। "আয়না মুঝসে মেরি পহেলি সি সুরত মাঙ্গে/ মেরে আপনে মেরে হোনে কি নিশানি মাঙ্গে।"

বুঝে উঠতে পারি না আমি কি আদৌ আছি কোথাও? অন্তত আপনজনদের হৃদয়ে কি আমি আদৌ বেঁচে আছি নাকি আমার অস্তিত্ব নিয়েই সকলে প্রশ্ন তুলতে ব্যস্ত!।চিনে উঠতে পারি না আয়নায় দেখা নিজেকেই। চিনতে চাই কিনা সে প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পাই না গানের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সবটুকু শোনার পরেও।

অন্যকে যেমন চিনে উঠতে পারি না অথবা বুঝে, ঠিক তেমনই নিজেকেও চিনে বা বুঝে উঠতে পারি না। আর পারি না অন্যের দিকে আয়না ঘুরিয়ে দিয়ে হেসে উঠতে। এই না পারা কি তবে ব্যর্থতার তালিকায় নাম নথিভুক্ত করতে যাবে? কেউ কি এই ব্যর্থতার প্যান ও আধার লিঙ্ক করানোর নির্দেশ দেবে?

নির্দেশগুলো চেনা বা বোঝার মধ্যে ফাঁক থেকে যাচ্ছে। বোঝা যাচ্ছে কোথাও কেউ কাজে ফাঁকি দিয়ে যাচ্ছে অনবরত। অনন্ত জুড়ে ক্ষত মুহূর্তের প্রলেপে সব কিছু ভোলাতে চাইলে তাকে কেউ উপেক্ষার নজরে সরিয়ে রাখতে চাইছে বারবার। সেও তার নিজের স্মৃতির প্রতিবিম্বকে ভুলতে চাইছে বারবার।

আয়নার নিজের মুখ কি স্মৃতি দেখে? দেখে সে কী শেখে? স্মৃতি কি সদা শিক্ষণীয় নাকি মাঝেমধ্যে সে নিজেকে খোঁজে আমার ভিতর? ভুল বললাম। আমরা কি স্মৃতির ভিতর নিজেকে খুঁজি নাকি নিজের পাওয়া না পাওয়ার হিসাব মেলাই স্মৃতি চারণায়?

আজ শুধু সেই আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে চেনার, বোঝার আর স্মৃতির হিসাব মেলানোর এক অভিনয় চলছে। একক অভিনয়। অভিনয় করছি আর অপেক্ষা করছি পরিচালকের এক নির্দেশের - "কাট"।

চিত্রঋণঃ অন্তর্জাল থেকে প্রাপ্ত।

পরিচিতি: বিশিষ্ট কবি। তবে তাঁর ছোটগল্প, উপন্যাস, মুক্তগদ্য, উত্তর সম্পাদকীয় সমস্ত লেখাই বাণিজ্যিক বড় কাগজে প্রকাশ পেয়েছে। মুদ্রণ ও প্রকাশনা ব্যবসার সাথে যুক্ত।