সাক্ষাৎকার

 

  • "হোমিওপ্যাথিতে সমস্ত পুরাতন রোগ সারে" - ডাঃ প্রকাশ মল্লিক

জীবন্ত কিংবদন্তী হোমিওপ্যাথ চিকিৎসক ডাঃ প্রকাশ মল্লিক
[এম.ডি. (হোমিও), সিনিয়র সুপার স্পেশালিস্ট হোমিওপ্যাথ]

[ডাঃ প্রকাশ মল্লিক হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা জগতে অতি পরিচিত নাম। তিনি একজন বিশ্ববন্দিত হোমিও চিকিৎসক। ডাঃ মল্লিক আন্তর্জাতিক স্তরে 'ওয়ার্ল্ড ফেডারেশন অফ হোমিওপ্যাথি'র সভাপতি পদ অলংকৃত করছেন। তিনি বহু জটিল রোগ সারিয়ে নজির সৃষ্টি করেছেন। তিনি ক্যান্সার, হাঁপানি, চর্মরোগ, হৃদরোগ, শিশুরোগ, স্ত্রীরোগ-এর উপর এখনও পর্যন্ত প্রায় ৪০টি পুস্তক রচনা করেছেন। ডাঃ মল্লিককে নিয়ে একটি স্লোগানের জন্ম হয়েছে - যে রোগ সারে না কোনো প্যাথিতে তার জন্য ডাঃ প্রকাশ মল্লিক আছেন। একটি প্রাচীনতম হোমিওপ্যাথিক ঔষধ প্রস্তুতকারক সংস্থার মতে তিনি কলকাতার তথা ভারতের অন্যতম সফল হোমিওপ্যাথি চিকিৎসক। 'ডটপেন ডট ইন' ই-পত্রিকার দ্বিতীয় সংখ্যায় তাঁর মতো একজন প্রথিতযশা চিকিৎসকের সাক্ষাৎকার পেয়ে আমরা কৃতজ্ঞ।]


ডটপেন ডট ইন-এর প্রতিনিধিঃ আপনি বর্তমানে ভারতের প্রখ্যাত হোমিও চিকিৎসক। আপনার কাছে প্রশ্ন হোমিওপ্যাথিতে কি সব রোগ সারে?

ডাঃ মল্লিকঃ কোন প্যাথিতেই সব রোগ সারে না, তা যদি হতো তাহলে অসংখ্য প্যাথির জন্ম হতো না। হোমিওপ্যাথিতে সমস্ত পুরাতন রোগ সারে। যে রোগ একবার কমে যায় আবার ফিরে ফিরে আসে, সেক্ষেত্রে হোমিওপ্যাথি ফলপ্রসূ। যে রোগ বিশেষ ঋতুতে হয়, সেক্ষেত্রেও হোমিওপ্যাথি ফলপ্রসু, এছাড়া যৌন রোগ, চর্ম রোগ, হৃদরোগ, শিশুরোগ, মানসিক রোগ সবক্ষেত্রে হোমিওপ্যাথি বিশেষ ফলপ্রসূ। ক্যান্সার, বান্ধ্যত্ব প্রভৃতি রোগও আরোগ্য করা সম্ভব।

ডটপেন ডট ইন-এর প্রতিনিধিঃ প্রায় দু'শো বছরের অনেক আগে হোমিওপ্যাথি আবিষ্কার করেছেন ডঃ হ্যানিম্যান। তার কি কোনো পরিবর্তনের প্রয়োজন নেই?

ডাঃ মল্লিকঃ নিশ্চয় আছে। হ্যানিম্যানের পদ্ধতি মূল পদ্ধতি। তবে প্রত্যেক সফল চিকিৎসকের স্বকীয় পদ্ধতি আছে। আমি যে পদ্ধতিতে চিকিৎসা করি, সেটা 'মল্লিক মেথড' নামে পরিচিত। 'মল্লিক মেথড' আর কিছুই নয়। হ্যানিম্যানের পদ্ধতিতে একটি শক্তিকৃত ঔষধ। আর তার সার মাদার টিংচার, এবং বায়োকেমিক, এতে আমি আশ্চর্যরকম ফল পাই।

ডটপেন ডট ইন-এর প্রতিনিধিঃ 'মল্লিক মেথড'-এর জন্ম কেন হল?

ডাঃ মল্লিকঃ আমি মেদিনীপুরের অখ্যাত গ্রাম চন্দ্রকোনা থানার শ্রীনগর গ্রামে চিকিৎসা শুরু করি। কিছু কিছু জটিল রোগী আসত, তাতে একটা ঔষধ প্রয়োগে আশানুরূপ ফল পাওয়া যাচ্ছিল না। তাই চিন্তা করতে করতে আজকের 'মল্লিক মেথড' এবং সত্যি কথা বলতে কি আমি এই মেথড প্রয়োগ করে আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞান যেখানে ব্যর্থ, আমাদের চিকিৎসা সেখানে সফল। এই সফলতার তালিকায় কিডনী স্টোন, গলব্লাডার স্টোন, ক্যান্সার, হাঁপানি, চর্মরোগ অর্শ, বান্ধ্যত্ব, ধ্বজভঙ্গ, সোরাসিস প্রভৃতি নিরাময় করা সম্ভব।

ডটপেন ডট ইন-এর প্রতিনিধিঃ সম্প্রতি 'ফিফটি মিলিসিমাস প্রোটেন্সি'র ব্যবহার হচ্ছে। এ ব্যাপারে আপনার অভিমত।

ডাঃ মল্লিকঃ হ্যানিম্যান অর্গানদের সিক্সার্থ এডিসনে 'ফিফটি মিলিমিনাস প্রোটেন্সি'র কথা বলেছেন। জটিল রোগের ক্ষেত্রে এবং দুরারোগ্য রোগের ক্ষেত্রে এই প্রোটেন্সি প্রয়োগ করে আমি বিশেষ সুফল পেয়ে থাকি।

ডটপেন ডট ইন-এর প্রতিনিধিঃ হোমিওপ্যাথিতে 'মাদার টিংচার' প্রয়োগ কতটা নীতিসম্মত?

ডাঃ মল্লিকঃ সার্জারি একটি পদ্ধতি। কিছু কিছু ক্ষেত্রে সার্জারির প্রয়োজন আছে। যেমন ব্যান্ডেজ, স্টিচ, এপটপিক গ্রেগন্যান্সী। লেবার কেসে বীচ প্রেজেনটেশান বা ফিটাল হেডের যা সাইজ তাতে নরম্যাল লেবার সম্ভব নয়, সার্জারির হেল্প নিতেই হবে। তবে আমরা হোমিওপ্যাথি চিকিৎসার মাধ্যমে সত্তর শতাংশ সার্জিক্যাল রোগ ভাল করে দিতে পারি। আমি অসংখ্য গলব্লাডার রোগী ভাল করেছি আমার চিকিৎসা জীবনে। ব্রেন টিউমার রোগী ভাল করতে পেরেছি। ব্রেন টিউমারের রোগীর অপারেশনের পরে আবার গ্রোথ হয়েছে এমন রোগীকেও সুস্থ করা সম্ভব হয়েছে।

ডটপেন ডট ইন-এর প্রতিনিধিঃ আজ আপনি হোমিওপ্যাথি জগতের আইকন। নবাগত চিকিৎসকদের যদি কিছু বলেন?

ডাঃ মল্লিকঃ হোমিওপ্যাথি কলেজে হোমিওপ্যাথি পড়ানো হয়। হোমিওপ্যাথি শিখতে গেলে সফল চিকিৎসকের কাছে পাঁচ বছর থাকতে হবে। আর চারটে 'H'-কে সঙ্গে নিতে হবে। প্রথম হল 'H' হোমিওপ্যাথির জনক হ্যানিম্যানের জীবনী পড়তে হবে। দ্বিতীয় আর 'H' Head মানে মেধা। তৃতীয় 'H' (Heart) হৃদয়। আর চতুর্থ 'H' (Hand) মানে পরিশ্রম করতে হবে। তবেই সফল চিকিৎসক হওয়া যাবে।

ডটপেন ডট ইন-এর প্রতিনিধিঃ শুনেছি আপনি কবিতা লেখেন? যদি একটা কবিতা শোনান?

ডাঃ মল্লিকঃ "জীবনের মানে কি জানি না,/ জীবনের মাত্রেই যদি হয় যন্ত্রণা,/ তবে যৌবন তার একমাত্র সান্ত্বনা।"

ডটপেন ডট ইন-এর প্রতিনিধিঃ হোমিওপ্যাথি চিকিৎসার কি আধুনিকীকরণের প্রয়োজন আছে?

ডাঃ মল্লিকঃ যে চিকিৎসায় কাজ হয় তা চিরকালীন এবং আধুনিক হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসার মাধ্যমে আজও নানা অসাধ্য সাধন হয়। তাই হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা জন্ম থেকে আধুনিক।

ডটপেন ডট ইন-এর প্রতিনিধিঃ হোমিওপ্যাথি চিকিৎসায় কি প্যাথোলজিক্যাল টেস্টের প্রয়োজন আছে?

ডাঃ মল্লিকঃ অবশ্যই প্যাথোলজিক্যাল টেস্টের প্রয়োজন আছে। আজকাল আমাদের কাছে ইউটেরাসে টিউমার দেখা গেলে তা তো আলট্রাসনোগ্রাফির মাধ্যমে দেখতে পারি। এছাড়া কিডনির পাথর বড় চিকিৎসার পর কতটা কম হল সেটা জানা যায়, টিবি কিংবা ক্যান্সার হয়েছে কিনা, জন্ডিস রোগীর বিলিরুবিন কতটা আছে জানতে গেলে টেস্ট করতে হবে। রক্তের ইউরিক এসিডের পরিমাণ জানতে পারলে খাদ্যগ্রহণের নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়। হোমিওপ্যাথিক বিজ্ঞানভিত্তিক চিকিৎসা যদিও, তাই বৈজ্ঞানিক সহযোগিতার প্রয়োজন। ব্যক্তিগতভাবে ক্যানসারের সিএ লেভেল দেখে হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা করে সিএ লেভেল কমাতে পেরেছি তার প্রমাণ আছে।

ডটপেন ডট ইন-এর প্রতিনিধিঃ তাহলে কি ক্যানসার চিকিৎসায় অন্যান্য চিকিৎসা পদ্ধতির মতো হোমিওপ্যাথির উপর ভরসা রাখা যায়?

ডাঃ মল্লিকঃ ক্যানসার এমন এক অসুখ, যার চিকিৎসা করা হয়। কোষের গঠন ও তাঁর শারীরবৃত্তীয় কার্যকলাপ রোগের ক্ষেত্রেও রোগ সারানোর ক্ষেত্রে সমানভাবে প্রযোজ্য। আমি ৩০ বছর ধরে ক্যানসারের চিকিৎসা করে চলেছি। হোমিওপ্যাথি চিকিৎসায় ক্যানসার নির্মূলই আশার আলো দেখাচ্ছে।

ডটপেন ডট ইন-এর প্রতিনিধিঃ অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে আমাদের ই-পত্রিকাকে সময় দেওয়ার জন্য।

ডাঃ মল্লিকঃ ধন্যবাদ... 'ডটপেন ডট ইন' ই-পত্রিকার পথ চলায় আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা রইল।

______________________________
চিত্রঋণঃ ডাঃ প্রকাশ মল্লিক-এর কাছ থেকে প্রাপ্ত।
Tags:
#DrPrakashMallick #Homoeopathy #MallickTherapy #WorldFederationOfHomoeopathy